শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন

ইলিশের ৭০ শতাংশ উৎপাদন বাংলাদেশেই

ইলিশের ৭০ শতাংশ উৎপাদন বাংলাদেশেই

নিউব ডেক্সঃ

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট ইলিশের ৭০ শতাংশের বেশির উৎস বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রমাগত বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। এবার তার চেয়ে আরো বেশি ইলিশ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
এবার বড় ইলিশ পাওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পরিপত্র অনুযায়ী, ইলিশ ধরা জালের ফাঁস হতে হবে সাড়ে ছয় সেন্টিমিটার, যা আগে ছিল সাড়ে চার সেন্টিমিটার। তাহলে জেলেরা ইচ্ছা করলেও আর ছোট ইলিশ ধরতে পারবে না।

কালের কন্ঠের এক সংবাদে বলা হয়, সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলেদের জালে এবার গত বছরের চেয়ে বড় আকারের এবং বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। তাঁরা বলছেন, সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ায় ইলিশের সুদিন ফিরেছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে সরকারি উদ্যোগ আরো প্রসারিত করতে হবে।

ইলিশ গবেষক ও চাঁদপুরের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমানের মতে, বেশ কয়েকটি কারণে বর্তমানে দেশে বড় আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে পানিতে দূষণ ও জলযান চলাচল কমেছে, আর এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় সাগরে বেশি ইলিশ মিলছে। মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম নিশ্চিত হচ্ছে; সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের মনিটরিংও বড় অবদান রাখছে।’

ড. আনিছুর আরো বলেন, ‘এসব কার্যক্রমের ফলে নদীতে জন্ম নেওয়া ইলিশ ঘুরেফিরে সাগরে যাচ্ছে, সেখান থেকে আবার নদীতে আসছে। এতে ইলিশের আকার যেমন বাড়ছে, তেমনি সংখ্যায় বেশি হচ্ছে।’

সরকারিভাবে গত বছর মে থেকে জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সমুদ্রে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। এবার করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এপ্রিল থেকেই ইলিশ ধরা বন্ধ রাখেন জেলেরা। গত ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর আগস্ট থেকেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্যবারের চেয়ে এবার বেশি বৃষ্টিপাতের কারণেও ইলিশ বেশি মিলছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে, এর মধ্যে বড় আকারের ইলিশই বেশি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ইলিশ নিয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ায় নির্ধারিত সময়ে জাটকা ধরা বন্ধ থাকে। একই সময়ে জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। এ কারণে প্রকৃতভাবে ইলিশ সংরক্ষণ হচ্ছে। মৌসুমে এর সুফল মিলছে।’

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইলিশ প্রজননসংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে এটা বড় ভূমিকা রাখছে। একসময় মাছ ধরা নিষিদ্ধের ঘোষণা থাকলেও প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ছিল না। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। জাটকা ধরতে গেলে জাল পুড়িয়ে দেওয়া, কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করেছে প্রশাসন। এতে জেলেরা নিয়মের মধ্যে থাকতে অভ্যস্ত হচ্ছেন, আর বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে জাটকা, ফলে মৌসুমে জেলেদের জালে আসছে বড় আকারের ইলিশ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) মাসুদ আরা মমি বলেন, ‘সরকারের সামগ্রিক উদ্যোগে ইলিশ উৎপাদন বাড়ছে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে জেলেদের খাদ্য সহায়তা সরকারের বড় একটি উদ্যোগ। গত ২০ আগস্ট প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘জেলেদের খাদ্য সহায়তা যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা পায় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাদের বেশি পরিমাণে সাহায্য দিতে পারলে ইলিশের উৎপাদনে আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি।’

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD