বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে
উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহিদ, তিলকা মাঝি

উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহিদ, তিলকা মাঝি

দীপক সাহা ( পশ্চিমবঙ্গ)

স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও আদিবাসীরা নিজ ভূমে পরবাসী। ২০২০ র ভারতবর্ষেও জল, জমিন, জঙ্গলের নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত ভূমিপুত্ররা। লাগাতার আন্দোলনের চাপে ঐতিহাসিক বিরসা লড়াইয়ের প্রায় ১১২ বছর পর ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘বনবাসী তফসিলি জনজাতি এবং অন্য পরম্পরাগত বনবাসীদের ‘বনাধিকার স্বীকার আইন ২০০৬’, লোকসভায় পাশ হয়ে সরকারি ভাবে বিজ্ঞাপিত হয়। সেই সময় থেকেই বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন এই আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিভিন্ন সময়ে আদালতে পিটিশন দাখিল করে। অনেক টালবাহানার পর ‘ওয়াইল্ড লাইফ ফার্স্ট ‘ নামের সংস্থার মামলার প্রেক্ষিতে গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ আদালতের মাননীয় বিচারপতিত্রয়, অরুণ মিশ্র, নবীন সিনহা এবং ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গসহ ২১ টি রাজ্যেকে নির্দেশ দিয়েছে, পাট্টার আবেদন খারিজ হওয়া পরিবারগুলোকে উৎখাত করতে হবে জঙ্গল থেকে। ফলে উচ্ছেদের আশঙ্কায় ভুগছেন প্রায় ২১ লাখ আদিবাসী-বনবাসী মানুষ। গরিব-গুর্বো, নিরক্ষর, সহজ সরল বনবাসীরা জীবনের জটিল আবর্তে পড়ে বৈধ কাগজপত্র প্রমাণ দাখিল করতে না পারায় ভোগসর্বস্ব নগরায়নের হুমকিতে বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত হওয়ার মুখে। পরবর্তীতে শীর্ষ আদালত অবশ্য আপাতত উক্ত নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছে। সংরক্ষনের বিরোধীতা করে আদিবাসী মানুষের জাতিসত্ত্বার ওপরেই কুঠারাঘাত করা হচ্ছে। অরণ্যবাসীরা আজ কোণঠাসা। যুগ যুগ ধরে অরণ্যকে রক্ষা করতে যাঁরা শহিদ হয়েছেন বা হচ্ছেন তাঁদের কথা আমরা ভুলে যাই। এই অস্থির সময়ে আদিবাসী জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে একজন তিলকা মাঝির বড্ড প্রয়োজন। যিনি অন্ধকারময় অরণ্যজাতির জীবনে পথ প্রদর্শক হবেন আবারও৷…আজ সময়ের স্রোতে পলিমাটি জমেছে। দীর্ঘ ২৭০ বছর অতিক্রান্ত ৷ আজ যখন জগৎ জীবনে অন্যায়ের পাহাড়, ভীরু কান্নারা….বাবা তিলকা মাঝিকে খোঁজে, যখন অত্যাচারিত অসহায় অরণ্যবাসীরা নেতা ও নেতৃত্বের অভাবে গুমরে মরে তখন তিলকা মাঝির অভাব অনুভূত হয়। অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক জাবড়া পাহাড়িয়া ওরফে বাবা তিলকা মাঝি। সেই বীর শহিদের বীরত্বগাঁথার কাহিনি আজকের পাতায়।

এ প্রসঙ্গে পঞ্চাশের দশকের সাঁওতাল কবি মার্শাল হেমরমের একটি কবিতা খুব মনে পড়ছে —
“ চিৎকার করে বলছ —
এই তৈরি করা জমি,
পুকুর,
খামার,
বাড়ি
এগুলো আমার নয়।

লাল চোখে
হুকুম করছ,
এগুলো ছেড়ে
চলে যেতে হবে —
যেখানে খুশি ঠিকানাহীন
তবে তো আঃ সার সাব তেগে হোয়োগঃ তিঞা।”

যুগে যুগে দেশে দেশে অত্যাচারিত মানুষের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে অসম সাহসী কিছু কিছু মানুষের আবির্ভাব হয় পৃথিবীতে। তাঁরা দেশ কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে অমরত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন জনজীবনে। পরাধীন ভারতবর্ষের বুকে অত্যাচারিত ইংরেজ সরকারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন প্রথম যে অরণ্যাচারী ভূমিপুত্র বীর সন্তান, তিনিই হলেন বাবা তিলকা মাঝি (মুর্মু)। ১৭৫০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারীতে সিঙ্গারসি পাহাড়ের সুলতানপুর থানার তিলকা গ্রামে বাবা সুন্দর মাঝি ও মা পান মাঝির ঘরে যে মানব শিশুর জন্ম হয়েছিল তিনি কোনো সাধারন মানব সন্তান ছিলেন না ; অরণ্যের কোলে বেড়ে ওঠা তিলকার ছোটবেলা থেকেই তির-ধনুকের সাথে সখ্যতা ছিল। বন্যজন্তু শিকার করা, কুস্তি লড়া, গাছে চড়া, পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা, গভীর বনে হিংস্র জন্তুর মোকাবিলা করা, খরস্রোতা নদীর জলে সাঁতার কাটা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর সহজাত কুশলিপনা ছিল। বন্য জীবনযাপনে তাঁর মন হয়ে উঠেছিল নির্ভীক ও সাহসী। তিনি ছিলেন তারুণ্যের তেজে দীপ্তমান,ভয়ঙ্কর জ্বালামুখীর অগ্নিগর্ভ স্বরূপ এবং তীক্ষ্ণধী সম্পন্ন জননেতা৷ তিলকা মাঝিই প্রথম যোগ্য নেতা যিনি সমগ্র আদিবাসী, কোল, ভীল, মুন্ডা, মাহালি, গারো প্রভৃতি আদিম উপজাতিকে সংগঠিত করেছিলেন।

পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর বাংলা ও বিহারের ক্ষমতা দখল করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপমহাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকা দখল করতে থাকে এবং খাজনা আদায়ের নামে তারা ধন-সম্পদ অবাধ লুট করতে থাকে। রাজমহল থেকে হাজারীবাগ ও মুঙ্গেরের সীমান্ত পর্যন্ত এলাকাটি ছিল গভীর জঙ্গল। বাঘ, ভালুক, হাতি, বিষাক্ত সাপের সঙ্গে লড়াই করে সাঁওতাল, পাহাড়ি, মাল পাহাড়ি আদিবাসীরা স্মরণাতীত কাল থেকে জঙ্গলে বসবাস করে আসছিল। এরা কোনো অধীনতা মানতে প্রস্তুত ছিল না। ১৭৭২ সালে ক্যাপ্টেন ব্রুক একদল সৈন্য নিয়ে পাহাড়িদের দমন করতে গেলে তীরের আঘাতে অধিকাংশ সৈন্য প্রাণ হারালে ব্রুক পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।

১৭৭৯ সালে অগস্টাস ক্লিভল্যান্ড ভাগলপুরের কালেক্টর নিযুক্ত হয়ে প্রান্তদেশ নামে একটি উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা করলে পাহাড়িরা সেখানে যেতে রাজি হয় নি। সাঁওতালরাও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন মানতে অস্বীকার করে। কোম্পানির বশ্যতা অস্বীকার করে সাঁওতালরা জমির ওপর খাজনা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। জমির ওপর খাজনা দেওয়াকে অন্যায়-অন্যায্য বলে সাঁওতালরা চিহ্নিত করে। ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈন্যরা খাজনা আদায়ের জন্য পাহাড়িদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে, সাঁওতালদের সম্পদ লুট করে এবং তাদের ভাগলপুরে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন করা শুরু করে। তারুণ্যের তেজে ভরপুর,যৌবনের আবেগে বলিষ্ঠ সিংহ হৃদয়, ব্রিটিশ সরকারের দমন পীড়ন নীতি মেনে নিতে পারেননি তিলকা মাঝি। সাধারন মানুষের ওপর নারকীয় অত্যাচার,ও শাসন শোষণ দেখে বীর তরুন তিলকার রক্তে প্রতিশোধের স্পৃহা জেগে ওঠে। সদ্য নব্য যুবক “শাল গিরা”র মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে বার্তা প্রেরণ করলেন রুখে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে ৷ ওঠো জাগো হয়েছে সময় প্রতিশোধ নেওয়ার।
প্রান্তিক সাঁওতাল মানুষ মুক্তিকামী দূত হিসেবে বাবা তিলকাকে বরণ করে নিলেন। দলে দলে সাঁওতাল নরনারী যোগ দিলেন। তিলকা গঠিত মুক্তি বাহিনীতে গোপনে চলল অস্ত্রবিদ্যার মহড়া ৷ তিনি নিজে অসম্ভব তীরধনুক ও বাটুল চালনায় পারদর্শী ছিলেন। তির ধনুক,বল্লম,বর্শা,গুলতি ও লাঠি নিয়ে বুক চিতিয়ে জল জঙ্গল জমিনের জন্য লড়াই করার জন্য বাহিনী গঠন করলেন। এগারোশো মতান্তরে তেরোশো ধর্নুধর নিয়ে সরাসরি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বীরপুত্র তিলকা। স্বাধীন পূর্ব ভারতের ইতিহাসে সে অসম লড়াইয়ে ব্রিটিশ সরকার প্রমাদ গুনেছিলেন। ভাগলপুরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ ইতিহাসে ‘ খেরওয়াড় বিদ্রোহ ‘ নামে পরিচিত। কথিত আছে যে, বাবা তিলকা মাঝি ১৭৭৮ সালে পাহাড়িয়া সর্দারদের নিয়ে কোম্পানী, সামন্ত জমিদার এবং মহাজনদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন।এই যুদ্ধে বাবা তিলকার সাথে যুক্ত হন সর্দার রমনা আহাড়ি,পাকুড় আমড়া পাড়া অঞ্চলের কারিয়া পুজহর, সিঙ্গারসি পাহাড় নিবাসী সর্দারেরা। এই দীর্ঘ আন্দোলনে বহু সাঁওতাল শহীদ হন।

১৩ জানুয়ারি ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ। ভোরের সূর্য পূর্ব আকাশে সবে তখন উঁকি দিয়েছে। রজতাভ সূর্যের তেজদীপ্তিতে সারা গগন উদ্ভাসিত৷ সেই সন্ধিক্ষণে আরেক মহাজ্যোতি তিলকা মাঝির বাটুলের আঘাতে প্রাণ হারাল ক্লিভল্যান্ড। ক্লিভল্যান্ডের মৃত্যুতে হিংস্র হয়ে উঠে ইংরেজরা। হাজার হাজার সৈন্য লেলিয়ে দেওয়া হয় বিদ্রোহীদের দমন করতে। কত সাঁওতাল নারী, পুরুষ, শিশু প্রাণ হারাল, কত গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হল, হাতি দিয়ে সাঁওতালদের ঘরবাড়ি ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল তার কোনো হিসাব রইল না। কয়েক হাজার সাঁওতালকে হত্যা করে বিদ্রোহানল নিভিয়ে দিল ইংরেজ বাহিনী। ইংরেজ সরকারের বিরুদ্বে রাষ্ট্রদ্রোহীতার জন্য হিংস্র কুকুরের মতো খুঁজতে লাগলো তিলকা মাঝিকে। তাঁরা জানতেন তিলকার মৃত্যু মানে আন্দোলনের সমাপ্তি ৷ বিস্তৃর্ণ জঙ্গলের ‘গোপন ডেরা ‘ দিনের আস্তানা হয়ে উঠল। রাতের অন্ধকারে গ্রামে ফিরে খাবারের সন্ধান করে আবারও পাড়ি দেওয়া অনির্দেশ্য পথে ৷

ইংরেজরা আদিবাসী সাঁওতালদের এই আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য লর্ড আয়ার কুটের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী পাঠায় ৷ দীর্ঘদিনের অনাহার,অনিশ্চিত জীবন ও দুর্ভিক্ষে ক্ষয়িষ্ণু জীবনের ফলে স্তিমিত হতে লাগলো মুক্তি বাহিনীর আন্দোলন।ইংরেজ বাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের কাছে তিলকা বাহিনীর দেশীয় অস্ত্র পরাজিত হয়৷ জাতির মুক্তিকামী মানুষের নেতা ধরা পড়লেন। তাঁকে ঘোড়ার সঙ্গে বেঁধে টানতে টানতে হিঁচড়ে নিয়ে চলল ভাগলপুর ক্যাম্পে। ক্যাম্পে আসার এতটা পথ পেরিয়েও তিনি জীবিত এবং সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে ৷ তা সত্বেও তিনি শৃঙ্খল মুক্ত হওয়ার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন ৷ তিলকার বীরত্ব আর অসম সাহস দেখে তৎকালীন ইংরাজ কর্মচারী রা স্তম্ভিত। বিস্মিত ইংরেজ রাজকর্মচারিরা আর কোনো ঝুঁকি না নিয়ে রাস্তার পাশে বট গাছে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়৷ অবসান হল একটা অধ্যায়ের ৷ দিনটি ছিল ১৩ জানুয়ারি, ১৭৮৫। অবসান হল একটা যুগ-সন্ধিক্ষণ মহাকালের ৷ এভাবেই নিভে যায় অরণ্য দেশের প্রথম বিদ্রোহ। তিলকা মাঝি ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শহীদ হিসেবে পরিগণিত।

আদিম উপজাতির বীরত্বের কাহিনী যেন শেষ অধ্যায়ের ছেঁড়া পাতা ৷বাবা তিলকা মাঝির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যা জীবন নাট্য থেকে মুছতে চেয়েছিলেন তৎকালীন ইংরেজ সরকার। কিন্তু ছাই চাপা আগুন এক সময় ঠিক ঝলসে ওঠে। হাসতে হাসতে তাঁর আত্মবলিদান পরবর্তীকালে সাঁওতাল বিদ্রোহ “হূলমাহা” এবং বীরসা মুন্ডার উলগুলানের আগুন উস্কে দিয়েছিল। এই আগুনের হলকা এত প্রখর ছিল যে, ১৮৯৪ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাবা তিলকা মাঝির নামে একটি তাম্র মুদ্রা প্রচলন করে পাহাড়িয়া আদিবাসীদের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। ভাগলপুর শহরে, তাঁকে যেখানে হত্যা করা হয় সেই স্থানে তার একটি মুর্তি স্থাপিত আছে। তাঁর সম্মানে ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয় তিলকা মাঝি ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সাঁওতাল পরগনার সদর শহর দুমকাতেও তাঁর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে।

বাবা তিলকা মাঝির “শালগিরা” সম্পর্কে তেমন কোন ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ না থাকলেও ১৮৬৮ সালে প্রকাশিত হান্টার কমিশনের রিপোর্টে এই লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটটি পাওয়া যায়। বাবা তিলকা মাঝিকে নিয়ে বেশ কিছু সাহিত্য রচনা হয়েছে। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর “শালগিরার ডাকে” উপন্যাসটি উল্লেখযোগ্য। এই উপন্যাসে মহাশ্বেতা দেবী তিলকা মাঝিকে মুর্মু গোত্রের সাঁওতাল বলে উল্লেখ করেছেন। হিন্দি উপন্যাসিক রাকেশ সিংহ তার উপন্যাস “হুল পাহাড়িয়া”তে তিলকা মাঝিকে জাওরা পাহাড়িয়া জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এস এম কলেজের রিডার রামন সিনহা “তিলকা মাঝি ভাগলপুর ইউনিভার্সিটি”র আওতাধীন একটি গবেষণা পত্রে দাবী করেছেন যে, জাওরা পাহাড়িয়া ইংরেজদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ করার আগে তিলকা মাঝি নাম গ্রহণ করেন। তিনি বলেন যে, তিলকা মানে হল রক্ত চক্ষুমান ঊদ্দিপা মাঝি অর্থ হল গ্রাম বা গোষ্ঠীর প্রধান। তিলকা মাঝির পরিচয় যাই হোক না কেন তিনি যে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে আদি বীর ঊদ্দিপা এ বিষয় কারও দ্বিমত নেই।

ইতিহাসের পাতায় ১৮৫৭ সালে মঙ্গল পাণ্ডের নেতৃত্বে সিপাহি বিদ্রোহ স্থান পায়। কিন্তু হায়, সিপাহি বিদ্রোহের ৭০ বছর আগে শহিদ আদিবাসী নেতা তিলকা পীড়িত ইতিহাসের বিবর্ণ পাতা হয়েই থাকেন। তাঁদের জন্ম হয়না, মৃত্যুও হয়না। জন্মদিন, মৃত্যুদিন শুধু ফিরে ক্যালেন্ডারের তারিখ হয়ে।

আর আমরা শুধু ধূপে দীপে স্মরন করি সেই বীরাত্মাকে। হৃদয়ে ধারন করিনা। তাঁর অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হইনা ৷
উদাত্ত কন্ঠে গর্জে উঠে বলতে পারিনি-
“হুপুচ হুপুচ দেলায়া..
জিওয়ী চালাঃ, মায়াম লিঙ্গিঃ,,,
বাবোন পিছৗঃ ভাইরে….”৷

ঋণস্বীকার –
১। তিলকা মাঝি, একটি তথ্যচিত্রঃ ভারত সরকারের আদিবাসী মন্ত্রক।
২। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা
ছবি – আন্তর্জাল

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD