শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন

এই দিনে মুক্তিবাহিনী দেশের বেশ কয়েকটি জেলা শত্রুমুক্ত করে

এই দিনে মুক্তিবাহিনী দেশের বেশ কয়েকটি জেলা শত্রুমুক্ত করে

ছবি; সংগৃহীত
উনিশশ’ একাত্তরের ডিসেম্বর মাস। এ মাসের প্রতি মুহূর্ত যেন ‘বাংলাদেশ’ সৃষ্টির কথা বলে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া বাঙালি এ মাসেই ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

৭ ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনী দেশের বেশ কয়েকটি জেলা শত্রুমুক্ত করে। আর মিত্রবাহিনী মুক্ত করে সিলেট শহরকে। ঝিনাইদহ ও মৌলভীবাজারও এদিন মুক্ত হয়। যৌথবাহিনী চান্দিনা ও জাফরগঞ্জ অধিকার করে। কুমিল্লা ও লাকসামে তুমুল যুদ্ধ হয়।

৬ ও ৭ ডিসেম্বরের কোনো এক সময় যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে জেনারেল নিয়াজি গোপন বার্তা পাঠায় রাওয়ালপিণ্ডি হেডকোয়ার্টার্সে। রিপোর্টে নিয়াজি উল্লেখ করেন, চারটি ট্যাংক রেজিমেন্ট সমর্থিত আট ডিভিশন সৈন্য নিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে ভারত। তাদের সঙ্গে আরও আছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৬০ থেকে ৭০ হাজার বিদ্রোহী (মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানিরা তখনও বিদ্রোহী উল্লেখ করত)।

নিয়াজি আরও লেখেন, স্থানীয় জনগণও আমাদের বিরুদ্ধে। দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম, চাঁদপুরে চাপের মুখে রয়েছি। পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠতে পারে। গত ১৭ দিনে যেসব খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে তাতে জনবল ও সম্পদের বিচারে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে গেছে। রাজাকারদের অস্ত্রসহ সটকে পড়ার সংখ্যাও বাড়ছে।

এর মধ্যেই যশোরের পতন হয়, যা পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে নাড়া দেয়। সাত তারিখেই গভর্নর আবদুল মালেক পূর্বাঞ্চলের সেনাপ্রধান লে. জে. নিয়াজির অভিমত উদ্ধৃত করে এক বার্তায় ইয়াহিয়াকে জানান, যশোরের বিপর্যয়ের ফলে প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের পতন প্রায় সম্পন্ন এবং মেঘনার পূর্বদিকের পতনও কেবল সময়ের ব্যাপার।

এ অবস্থায় ‘আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সামরিক সহায়তা না পৌঁছায়’ তাহলে জীবন রক্ষার জন্য বরং ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করা বাঞ্ছনীয়।

এদিন রাত ১০টায় আকাশবাণী থেকে হিন্দি, উর্দু ও পশতু ভাষায় জেনারেল মানেকশ বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই।

মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য তোমাদের ঘিরে রেখেছে। তোমরা যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছ, তারা তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। অনেক দেরি হওয়ার আগেই তোমরা আত্মসমর্পণ করো।

আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকেও বাংলা সংবাদ বুলেটিন প্রচার করা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকেও সকাল-সন্ধ্যায় যুদ্ধের খবরাখবর, দেশাত্মবোধক গান ও চরমপত্র প্রচার করা হয়।

এদিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে অর্থনৈতিক সাহায্যদান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। মার্কিন সিনেটে এবং হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে ডেমোক্র্যাট দলীয় কোনো কোনো সদস্য পাকিস্তানি জান্তার গণহত্যা, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী নীতির প্রতি মার্কিন প্রশাসনের সমর্থন এবং জাতিসংঘের বিলম্বিত ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন।

এদিকে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা দলে দলে রাজধানীর আশপাশের গ্রামে অবস্থান নিতে শুরু করেন। কারফিউর রাতে তারা দু’চারজন করে নদী পেরিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে অপারেশন চালান। গেরিলাদের চোরাগোপ্তা হামলার ভয়ে পাকসেনারা রাতে ক্যাম্প থেকে বের হয় না।

গেরিলারা যখন রাতের অন্ধকারে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বোমা হামলা ও ফাঁকা গুলিবর্ষণের মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিলেন ঢাকাবাসীকে, তখন ঢাকা সেনানিবাসে দখলদার বাহিনী তাদের দোসরদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হিটলিস্ট তৈরি করে।

এদিকে ভারত ও ভুটানের স্বীকৃতিতে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তান সামরিক শাসকরা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD