নিউজ ডেস্কঃ
এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের অভিযোগে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক সেলিনা আখতার মনি বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ কর্মকর্তা) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমঅ্যান্ডডিসি) রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন। এ ছাড়া যে ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ দেখিয়েছেন, তাঁদেরও আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন কুমিল্লা জেলার মো. ইমান আলী ও মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, সাতক্ষীরার সুদেব সেন, টাঙ্গাইলের তন্ময় আহমেদ, ভোলার মো. মাহমুদুল হাসান, চাঁদপুরের মো. মোক্তার হোসাইন, ঢাকার মো. আসাদ উল্লাহ, গাজীপুরের মো. কাউসার, নারায়ণগঞ্জের রহমত আলী, বাগেরহাটের শেখ আতিয়ার রহমান, ফেনীর মো. সাইফুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জের মো. আসলাম হোসেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালজালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ নেন। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাস করেন বলে জানান। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহার করে বিভিন্ন তারিখে বিএমঅ্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রেশন যোগ্যতার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর নিয়ে দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্ন করেন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছেন। কিন্তু রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায়, তাঁদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া।
এজাহারে আরো বলা হয়, এমবিবিএস সনদ যাচাই করার জন্য সনদপত্রগুলোর অনুলিপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সনদপত্রগুলো যাচাই করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সেকশনে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকে রেকর্ডপত্র পাঠানো হয়। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, উল্লিখিত ১২ জনের এমবিবিএস সনদ ভুয়া। এ ছাড়া সনদগুলোর স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য হস্তলেখা বিশারদের মতামত নেওয়া হয়। তাতেও দেখা যায়, সনদের স্বাক্ষরগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। ওই ১২ জন কখনো তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। কেউ কেউ শুধু ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে গিয়েছিলেন।
অন্যদিকে বিএমঅ্যান্ডডিসির সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো সতর্কতা বা নিয়ম-নীতি মানা হয়নি। বিএমঅ্যান্ডডিসি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিন প্রার্থীরা যেসব ডকুমেন্ট জমা দেন সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করে রেজিস্ট্রারের কাছে মূল সনদ ও এর ছায়ালিপি উপস্থাপন করেন। তখন রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া মূল রেকর্ডপত্র দেখে আবার ছায়ালিপিগুলো সত্যায়িত করেন। সে কারণে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ডকুমেন্টগুলো সম্পর্কে তাঁরা জ্ঞাত ছিলেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।
Leave a Reply