খাদেমুল মোরসালিন শাকীর,নীলফামারী প্রতিনিধি\
আগাম জাতের আলু চাষাবাদের জন্য উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে বেঁচে নিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় আগাম জাতের আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ১শ ২০ হেক্টর জমিতে। এ উপজেলার উচুঁ জনপদে এক সময় চাষাবাদ করা হতো তামাক ও আগাম জাতের আউশ ও আমন ধানের চাষ। সেই ধান ঘরে তুলতে না তুলতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা কম লাভবান হওয়ায় আগাম আলু চাষাবাদের কথা চিন্তা করে। সেই থেকে এ এলাকার মানুষ আগাম আলু চাষ করে বছরে দুই খন ধানের চেয়েও বেশী লাভবান হওয়ার ফলে তারা আলু চাষের উপর বেশী করে ঝোক দিয়েছেন। আগাম জাতের আলু চাষ করে বাজার ধরার প্রতিযোগীতায় নেমেছেন এ অঞ্চলের কৃষক। এজন্য জমিতে হালচাষ, সার প্রয়োগ বিভিন্ন হিমাগার থেকে উন্নত জাতের আলুর বীজ সংগ্রহ করে আগাম আলু রোপনের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন কৃষকেরা। ইতঃমধ্যে একাধিক কৃষক আগাম আলু রোপণ করেন তাদের জমিতে। অপর দিকে হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে লাগানো আলুর ক্ষেত পানিতে ডুবে যায়। আলু রোপন করার দুইদিন অতিবাহিত হতে না হতেই বৃষ্টির পানি জমিতে জমে থাকার ফলে রোপন করা আলুর বীজ নষ্ট হয়েছে অনেক কৃষকের। ফলে অনেক কৃষকের লোকসানের খাতায় নাম দিয়ে মাথায় হাত দিয়েছেন। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে আলু রোপন শুরু করে এই অঞ্চলের আলু চাষিরা। কিন্তু এ বছর সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার ফলে আলুর জমি চাষ করে বারবার হতাশ হয়ে পড়ছেন চাষিরা। আর এ কারণেই আগাম আলু উৎপাদনে প্রায় দুই সপ্তাহ দেরী হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি বিভাগ। চলতি বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন আলু চলে যেত উত্তরের এ জনপদ থেকে। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ উপজেলার কৃষক সীমাহীন ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেও সেপ্টেম্বর মাসের গেল সপ্তাহে উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামের কৃষক এজাবুল হক লালবাবু ১শ শতাংশ জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছিলেন। রোপনের পরের দিন থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টিপাত। এতে তার রোপনকৃত আলুর ক্ষেত হাটু পানিতে ডুবে যায়। পচনের ভয়ে ওই কৃষক রোপনকৃত আলু পানির নিচ থেকে উত্তোলন করে আবারো বাড়ীতে সংরক্ষণ করেন।
আগাম আলু চাষবাদের বিষয়ে ওই কৃষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আগাম আলু বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। আবহাওয়া ভাল থাকলে এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে খরচ বাদে লাভ হতো ৫০হাজার টাকা। যার আলু যত আগে উঠবে সে কৃষক ততবেশি লাভবান হবেন।আগাম আলুর বাজারও পাওয়া যায় ৫০/৬০টাকা মত। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া জনিত কারণে আগাম আলু চাষাবাদে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছি। এতে আমার হাল চাষ বীজ শ্রমিকসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের আলু চাষী বেলাল হোসেন জানান, এ বছর আলুর বীজের দামও চড়া, খরচও বেশি। আগাম আলুর বাজার পাওয়ার আশায় ৩০শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছিলাম। কিন্তু ভারী বর্ষনের কারণে আলু ফলনের বিপর্যয়ের আশংকা করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, এ বছর আবহাওয়া জনিত কারণে অনেক আগাম আলু চাষীকে আগাম আলু চাষে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও কিছু চাষী আগাম আলু চাষাবাদ করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আবহাওয়া ভাল না হওয়া পর্যন্ত কোন কৃষককে চালু চাষাবাদের জন্য আমরা পরামর্শ দিচ্ছি না।
Leave a Reply