শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন

কুমিল্লার এই মন্দিরে কখনও পূজিত হয়নি, জেনে নিন ইতিকথা

কুমিল্লার এই মন্দিরে কখনও পূজিত হয়নি, জেনে নিন ইতিকথা

সুনীলঃ

বৃহত্তর কুমিল্লা বৃটিশ আমলে ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজাদের রাজত্বকালে এ অঞ্চলে প্রচুর মন্দির ধর্মীয়স্থাপনা ইত্যাদি নির্মাণ করেগেছেন তারা। এসব মন্দির নির্মাণের পেছনে আছে বিচিত্র ইতিহাস ও কাহিনী। এসব কাহিনী লোকমুখে এখনো প্রচলিত। তেমনি এক কাহিনী কুমিল্লার জগন্নাথপুরে অবস্থিত শ্রীশ্রীজগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে।

ত্রিপুরার রাজমাতার প্রবল ইচ্ছাছিল পুরী ধামে গিয়ে জগন্নাথ দেব দর্শণ করার। কিন্তু রাজমাতা অতিশয় বৃদ্ধা হওয়ায় তাহাকে সুদূর পুরীতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলনা। রাজমাতা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে তার পুত্র রাজাকে নির্দেশ দিলেন ঠিক পুরীর আদলে নিজ রাজ্যে একটি মন্দির নির্মাণ করে জগন্নাথ দেব প্রতিষ্ঠা করার জন্য। যা দেখে তিনি তৃপ্ত হবেন। মন্দির নির্মাণ করতে হবে রাজধানী আগরতলা থেকে দূরে জগন্নাথপুরে। রাজমাতার আদেশ বাস্তবায়নে শুরুহলো মন্দিরের নির্মাণ কাজ। রাজসিক আয়োজনে মন্দির নির্মাণ করতে প্রায় ৯ বৎসর সময় ব্যয় হয়। সুদূর পুরীধাম থেকে জগন্নাথ দেবের মূূর্তি তৈরী করে এনে এ মন্দিরে স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে মন্দির নির্মাণ প্রায় শেষ। কিন্তু সুদূর পুরীধামে নির্মিত জগন্নাথ মূর্তি আসতে বিলস্ব হচ্ছিলো। এতে নির্মিত মন্দিরে পূজোর কাজ শুরু করতেও বিলম্ব হচ্ছিলো। এদিকে রাজমাতার তর সইছিল না। তিনি অতিশয় বৃদ্ধা হওয়ায় তার মনোবাসনা অপূরিত থাকার শঙ্কা জাগে। তাই তার ছেলেদেরকে না জানিয়ে অতিগোপনে আরেকটি জগন্নাথ মূর্তিনির্মাণ করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন স্থানীয় এক দক্ষ কারিগরকে।

স্থানীয় কারিগর কর্তৃক মূর্তি তৈরী শেষ। ইতোমধ্যে পুরীধামে রাজার নির্দেশে নির্মিত মূূর্তিও এসেগেল। তখন স্থানীয়ভাবে নির্মিত মূর্তি আর মন্দিরে আনা হলনা, আর স্থানীয়ভাবে মূর্তি নির্মাণের কথাও কাউকে জানানোও হল না। বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন মানে গুপ্ত রাখা হলো এবং কুমিল্লা শহরের ডিকাম্বরীতলায় আরেকটি মন্দির নির্মাণ করে সেখানে তা স্থাপন করা হয় যা বর্তমানে গুপ্তজগন্নাথ মন্দির নামে পরিচিত।

রাজমাতার ইচ্ছাপূরনার্থে জগন্নাথপুরে যথাসময়ে নান্দনিক কারুকার্যখচিত জগন্নাথ মন্দির নির্মান সম্পন্ন হল। সোনাদিয়ে মোড়ানো হল মন্দিরের চুড়া। বহু মূল্যবান দ্রব্যাদি দিয়ে মন্দির সাজানো হলো। শুধু শ্রীশ্রীজগন্নাথ দেবতা স্থাপনের কাজ বাকি । আর এই সময়েই স্থানীয় তিন তস্করের নজর পড়লো মন্দিরের চুড়ায় স্থাপিত সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্যাদির প্রতি।

একরাত্রে সুযোগবুঝে তিন তস্কর মন্দিরে ঢুকে চুড়ায় আরোহন করে। সোনা ও অন্যান্য দ্রব্যাদি চুরি করে নামার সময় অলৌকিকভাবে মন্দিরের ভিতর তিন চোর মারা যায়। চোর তিনজন ছিল অন্যধর্মাবলম্বী। মন্দিরের ভিতর এই অপমৃত্যুর ঘটনায় মন্দির হয়েযায় অপবিত্র। তাই এত সাধ করে এত সাধনা করে নির্মিত এই অপবিত্র মন্দিরে আর জগন্নাথ দেবতা স্থাপন হলো না। বাস্তব নির্মমতায় ষোলভোজাকৃতির এই নান্দনিক মন্দিরটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় শুধু একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ হিসেবে পড়ে আছে।

এদিকে রাজমাতার নির্দেশে পরিত্যক্ত মন্দিরের পাশেই তরিঘড়ি করে আরেকটি একতলা ভবন নির্মাণ করে সেখানে স্থাপন করা হয় সুদুর পুরীধাম থেকে বহু কষ্টে বহু সময় ব্যয় করে আনা জগন্নাথ দেবকে। যাহা এখন পূজিত হয়। এখন এ মন্দিরটি ইসকন কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD