দেব কুমার বেরা
“কাঁটাতার।
সীমানা… দেশ ভাগ!
বাবা, মা, ঠাকুমার হাত ধরে ‘ইন্ডিয়ায়’ আগমন। ঠাঁই হল রেল স্টেশনের পাশে জলা জঙ্গলে। ঝুপড়ি বানিয়ে ‘উদ্বাস্তু’ তকমা লাগিয়ে অনাহারে বা অর্ধাহারে দিন গুজরাণ। সাপ, ব্যাঙ, গরু, ছাগল, কীট – পতঙ্গের সঙ্গে সহবাস।
এবার বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর লড়াই।
বাবা সঙ্গে করে হারমোনিয়াম ও গানের খাতাটা আনতে ভোলেনি। স্টেশনে গাছের তলায় বসে গানের আসর জমিয়ে দিত বাবা, আর যাতায়তের পথে সহৃদয় যাত্রী কৌটোয় দু – চার আনা ফেলে যেত। পরে বাবা কীর্ত্তণের দল তৈরী করে দুনিয়া চষে বেড়াল অন্ন সংস্থানের আশায়।
সেই জলাজমি এখন ঘিঞ্জি ইঁট পাথরের জঙ্গলে পরিবর্ত্তণ। দিন দুবেলা কলরোল, কোলাহল, চিৎকার, চেঁচামেচি – এটা কলোনী।
তারপর বহু উথান পতন, স্লোগান, রং পরিবর্তণ এবং উন্নয়ন। এখন পৌরসভার নির্দেশ এসেছে – রাস্তা চওড়া হবে, ভাঙ্গা পড়বে আমদেরও বাড়ি।“
ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যাওয়া ইঁট বালি, সিমেন্টের ধোঁয়াশার মধ্যে আমরা আবারও ‘উদ্বাস্তু’! হঠাৎ দেখি সেই ধুলো ধোঁয়াশার মধ্যে নুব্জ বাবা উবু হয়ে কী যেন খুঁজে চলেছে! কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই আমতা আমতা করে উত্তর আসে
-‘গানের খাতা’
Leave a Reply