বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে
না ফেরার দেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নারী নেত্রী আয়েশা খানম

না ফেরার দেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নারী নেত্রী আয়েশা খানম

রূপশ্রী চক্রবর্তী,

‘সকাল বেলার আলোয় বাজে
বিদায় ব্যথার ভৈরবী। ‘
রবিঠাকুরের চরণটি বড় নির্মম সত্য হয়ে গেলো আমাদের জীবনে আজ।

ভোরের আলোয় যখন চারিদিক মাখামাখি
ঠিক তখনই এলো দুঃসংবাদটি।

সন তারিখ মনে নেই।
ইডেন কলেজে পড়ার সময় ঢাকাস্হ নানান সাহিত্য সাংস্কৃতিক সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত হই আমি। তেমনি একটি কাজে পরিচয় ঘটে
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম এর সাথে। নেত্রকোনার সুকন্যা আয়েশা আন্টি আমার পারিবারিক পরিচয় জেনে খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। বাবা কাকা সবাইকেই চিনতেন।
উদাসীন আমি অনেকদিন যোগাযোগ রাখতে পারিনি। ২০১০ এ রোকেয়া দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়ার ভূমিকায় অভিনয় করে প্রধানমন্ত্রী সহ সকলের প্রশংসা অর্জন করি। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার অপেক্ষায় যেন ছিলেন আন্টি। আমাকে জড়িয়ে ধরে কতো আদর! তারপর থেকে আবার যোগাযোগ। মহিলা পরিষদের কতো ভালো ভালো অনুষ্ঠানে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
অনলাইন অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে। জানি, শুনতে পাই, আন্টি অসুস্থ। কল করা হয়নি। অসুস্থ কাউকে কল করে খবর নেয়া আমার কাছে মনে হয় তাঁকে পীড়ন দেয়া।
কিন্তু আজ খুব খারাপ লাগছে, আর কোনোদিন কথা হবেনা। কখনো আর ডাকবেন না। প্রিয়জনেরা এভাবেই হারিয়ে যায়। যেদিন আমার ডাক আসবে ওপারে যাবার সেদিন ভয় পাবোনা জানবো আমার ভালবাসার অনেকজন আছেন ওপারে।
ওপারে ভালো থাকুন আন্টি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি সর্বজন শ্রদ্ধেয় আয়েশা খানম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার সাথে লড়াই করে চলেছিলেন। শনিবার (২ জানুয়ারি) ভোরে এই লড়াই এর অবসান ঘটে। রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আমার চোখে চিরসবুজ ৭৪ বছর বয়সী এই মহীয়সী আজ থেকে কেবলই ছবি ; যাঁর স্হান এখন থেকে আমাদের হৃদয়ের গহিনকোণে।

তাঁর প্রাণের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ সকালে তিনি এসেছিলেন কিন্তু প্রাণহীন দেহে। সেখানে তাঁকে সশ্রদ্ধ ভালবাসা জানানো হয় । আজ নেত্রকোনায় জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।

সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত ঃ

১৯৪৭ এ যখন ভারতবর্ষে ঘটে গেছে বিরাট পরিবর্তন। সেই উত্তাল সময়ে জন্ম এক সূ্র্য কন্যার। তারিখটি ছিল ১৮ অক্টোবর।
নেত্রকোনার গাবড়াগাতি গ্রামে আটকে থাকেনি
পিতা গোলাম আলী খান এবং মা জামাতুন্নেসা খানম এর সুকন্যা আয়েশা খানমের জীবন।

হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পর্ক এই তেজস্বীর । তবে ১৯৬৬ সাল থেকে ছাত্র আন্দোলনে পুরোপুরি সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ফলে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের পথে এগিয়ে যেতে যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল সেসবগুলোতেই তিনি সামনের সারিতে ছিলেন।

১৯৭০ সালে আয়শা খানম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রাবস্থাতেই আয়শা খানম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৬৮-৬৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের জি. এস. ১৯৬৯-৭০ সালে সালে ভিপি নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ- কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়নের সম্মিলিত কমান্ডের আওতাভুক্ত থেকে কাজ করেন তিনি।
একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্রনেতা মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তাঁদেরই একজন আয়েশা খানম। পরে আগরতলায় গিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তিনি।

সংগ্রামী নেত্রী আয়েশা খানম। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। এছাড়া রোকেয়া হলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ঢাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠিত করার দায়িত্ব ছিল মূলত আয়েশা এবং তাঁর সহকর্মী ছাত্র নেতাদের উপর। এছাড়া ছাত্রনেতা হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সচেতনতার কাজেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন তিনি।

প্রয়াত কবি বেগম সুফিয়া কামালের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’ বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নারী সংগঠন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্বে যার নাম ছিল “পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদ”।

এই মহিলা পরিষদের মাধ্যমে তিনি নারীদের অধিকার আন্দোলনে ছিলেন সোচ্চার।

তাঁর জীবনপথে প্রেরণা দিয়েছেন জীবনসাথী প্রকৌশলী গোলাম মুর্তজা খান। এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন। একমাত্র মেয়ে অধ্যাপক উর্মি খান এর প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।

অনন্তের পথে আজ মহীয়সী আয়েশা খানম। কিন্তু তাঁর আর্দশ আলোকবর্তিকা হয়ে যুগ যুগ ধরে ঔজ্জ্বল্য ছড়াবে বাঙালির মননে।

শ্রদ্ধা জানাই –
রূপশ্রী চক্রবর্তী,
সংস্কৃতি কর্মি ।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD