রিয়াজ উদ্দিন রেজু, ইটালি।।
আমাদের কুমিল্লা জিলা স্কুল , ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কৃতি ছাত্রটি কি ছিলেন না এবং কি অবদান ছিল না তাঁর এই দেশের জন্য ???
ছিলেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠ সহচর,
১৯৭২ এর সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য ( Members of the National Assembly ) ,
মুক্তিযুদ্ধে ২নং সেক্টরের সিভিল লিয়াজোঁ অফিসার , কুমিল্লা সদর আসনের প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য, স্বাধীনোত্তর কুমিল্লা জেলার প্রথম গভর্নর, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি , কুমিল্লা রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান, কুমিল্লা জেলার রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান।
তাছাড়া অধ্যাপনার সময় তিনি ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এমনকি তিনি স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ কমিটির সদস্য ছিলেন , ছিলেন BARD ( Bangladesh Academy for Rural Development) এর বোর্ড অব গভর্নরস । এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড স্থাপনের আন্দোলনে ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় , কুমিল্লার এই বিখ্যাত রাজনীতিবিদ , শিক্ষাবিদ এবং সমাজসেবী’কে বর্তমান প্রজন্ম চিনে জানে কি না তা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে । আবার যারা জানেন তারাও দায়িত্ব নিতে চান না তেমনভাবে উনার সম্বন্ধে মানুষকে জানাতে শুনাতে , কি যেন এক অজ্ঞাত কারনে ।
এমনকি কুমিল্লা শহরে কোন স্মরণ সভা , আলোচনা সভা হয় না তাঁর জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে ঘটা করে , যা থেকে বর্তমান প্রজন্ম জানবে, গর্ব করবে , অনুপ্রাণিত হবে নির্লোভী , নিরহংকারী, সাহসী এই মানুষটির বহুমুখী প্রতিভা থেকে ।
খ্যাতনামা এই শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ ১৯২৯ সালের ৪ এপ্রিল বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
এবং ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ ইন্তেকাল করেন তিনি ঢাকাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
অধ্যাপক আলম ১৯৪৪ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল হতে মেট্রিকুলেশন, ১৯৪৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে আই.এস. সি, এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পদার্থবিজ্ঞানে এম.এস.সি পাস করেন।
এম.এস.সি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পূর্বেই ১৯৫০ সালে যোগ দেন তিনি মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে। তারপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রায় দু’দশক অধ্যাপনা করেন অত্যন্ত সুনামের সাথে ।
১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে বদলি হন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অধ্যাপনার সরকারি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন এবং
১৯৭০ সালে কুমিল্লা সদর আসনে আওয়ামী লীগ হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (MNA ) নির্বাচিত হন অধ্যাপক আলম ।
১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চের ২৩ তারিখ “পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে” কুমিল্লা টাউন হলে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি । এবং ঐ পতাকা নিয়ে বিশাল মিছিল সারা শহর প্রদক্ষিণ করে তাঁর নেতৃত্বে ।
বঙ্গবন্ধু’র ৭ মার্চের ভাষণে সারাদেশে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দিলে বৃহত্তর কুমিল্লার সকল নেতাদের সম্মতিক্রমে অধ্যাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলমকে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়।
তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে ২নং সেক্টরের সিভিল লিয়াজোঁ অফিসারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক আলম । তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের বহু ক্যাম্প স্থাপিত হয় আগরতলা , সোনামুড়া’র বিভিন্ন স্থানে ।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হন তিনি ।
১৯৭৩ সালে পুনরায় কুমিল্লা সদর আসন হতে আওয়ামী লীগের টিকেটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অধ্যাপক আলম ।
এমনকি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক কুমিল্লা জেলার গভর্নর নিযুক্ত হন তিনি ।
দীর্ঘ ২২ বছর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম নিষ্ঠা , সততা , সহসিকতা এবং সুনামের সাথে ।
প্রথিতযশা এই শিক্ষাবিদের ছাত্ররা বহু উচ্চতর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং এখনও আছেন দেশ বিদেশে ।
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন দেশের এই বীর সন্তানকে বেহেস্ত নসিব করেন ।
আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সহযোদ্ধারা যেন উনাকে তুলে ধরেন যথাযথভাবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে দায়িত্ব নিয়ে , স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
Leave a Reply