শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৭ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
ঐতিহ্যবাহী আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের ৮৬ তম ইছালে ছাওয়াব মাহফিল আজ কৃষক জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে কসবায় কৃষক সভা অনুষ্ঠিত রাজধানীতে ঐশী বাংলা জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন-২০২৫ সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান ভূইয়ার জানাযা ও দাফন সম্পন্ন কসবা ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের নতুন ভর্তির মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত আল্লামা মরহুম গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর দোয়া মাহফিল সম্পন্ন কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের
প্রেম, দ্রোহ আর চির বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ দিবস আজ

প্রেম, দ্রোহ আর চির বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ দিবস আজ

এস এম শাহনূর

প্রেম, দ্রোহ আর চির বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট আজকের এই দিনটিতে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) মৃত্যুবরণ করেন বাংলা, বাঙালির চির বিদ্রোহের কবি, প্রেম, দ্রোহ-দুঃখ আর ভালোবাসার কবি,বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

১৯২২ সালে কবি নজরুলের লেখা-‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে তিনি বিদ্রোহী কবির শিরোপায় অভিষিক্ত হন। কবি তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘বিদ্রোহী’তে লিখেছেন,
আমি চির বিদ্রোহী বীর
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।
মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর হাতে রণ তুর্য…

কবি নজরুলের এই মহাপ্রয়াণ দিবসে আজ তাঁকেই আমাদের বড় বেশি প্রয়োজন। কেননা তিনি নিজের সম্পর্কে যথার্থ বলেছিলেন,”সুন্দরের ধ্যান, তার স্তব গানই আমার উপাসনা, আমার ধর্ম। যে কূলে, যে সমাজে, যে ধর্মে, যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি, সে আমার দৈব। আমি তাঁকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই কবি। এই সমাজে জন্মেছি বলে, আমি শুধু এই সমাজের বা এই দেশেরই নই, আমি সকল দেশের, সকল মানুষের।
আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, যা মিথ্যা-কলুষিত-পুরাতন-পঁচা সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে ভণ্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দু’টোর কোনোটাই নয়। আমি কেবলমাত্র হিন্দু মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি। গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।মানুষের জীবনে একদিকে কঠোর দারিদ্র-ঋণ-অভাব; অন্যদিকে লোভী অসুরের যক্ষের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা পাষাণ স্তুপের মতো জমা হয়ে আছে। এই অসাম্য ভেদজ্ঞান দূর করতেই আমি এসেছিলাম। আমার কাব্যে সঙ্গীতে কর্মজীবনে অভেদ ও সুন্দর সাম্যকে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।”
(৬ এপ্রিল ১৯৪১খ্রি:, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’র রজত জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠান,কলকাতা মুসলিম ইনস্টিটিউট হল।)আর তাইতো তিনি এমন করে বলতে পেরেছেনঃ
গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে,সবকালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

নজরুলের প্রতিবাদ আর তাঁর লেখনীর অন্যতম দিক হলো নজরুলই ভারতবর্ষে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেন। বাংলাদেশ’ শব্দটি কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় প্রথম উচ্চারিত হয়-বাংলা, বাঙালির সেই চিরকালের কবি তার একটি গানে লিখেছিলেন-‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো-তবু আমারে দেবো না ভুলিতে..।’ বিদ্রোহী কবিতা রচনার মাধ্যমে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত নজরুল ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। কবি রবীন্দ্রনাথ বিদ্রোহী নজরুলকে প্রায়ই বলতেন,
‘দ্যাখ উন্মাদ। তোর জীবনে শেলীর মতো, কীটসের মতো খুব বড় একটা ট্রাজেডি আছে, তুই প্রস্তুত হ’।
পরবর্তীকালে ১৯৪২ সালেই জীবনের সাথে অবিরল যুদ্ধ করতে করতে কী এক অজানা অভিমানে মধ্যবয়সী কবি চিরকালের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। আমরা বঞ্চিত হই তাঁর আরও অনল সাহিত্য সুধা থেকে।অজ্ঞাত রোগে সাহিত্যাকাশ থেকে ঝরে পড়ার আগে কবি এভাবেই তাঁর শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছিলেন কাব্যলক্ষ্মীকেঃ
অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে
প্রদীপ শিখা সম,
কাঁপিছে প্রাণ মম
তোমার সুন্দর ভঙ্গিতে।
প্রেম পূজারী কবির জীবনে তাই নার্গিস, প্রমিলা বা ফজিলাতুন্নেসারা এসেছেন বিরহী চরিত্র হয়েই। প্রমিলা কবিকে ঘরে বাঁধতে পারলেও নার্গিসের জন্যই বিয়োগ ব্যথাতুর প্রেমপূজারী কবি গান রচনা করেনঃ
যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
কেন মনে রাখ তারে
ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে।

কয়েক হাজার গানের রচয়িতা কাজী নজরুলের গানগুলোর মধ্যে ১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বারবার প্রচারিত হতো-
➤‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু/ দুস্তর পারাপার ওহে’

➤‘কারার ওই লৌহ কবাট/ ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট’

➤‘শেকল পড়ার ছল/ মোদের এই শেকল পড়ার ছল/ এই শেকল দিয়েই শেকল তোদের করবো রে বিকল’

➤‘চল চল চল-উর্ধ্বগগনে বাজে মাদল’ ইত্যাদি গান।
স্বাধীনতা পরবর্তী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বিদ্রোহী কবি নজরুলের লেখা-‘চল চল চল-উর্ধ্বগগনে বাজে মাদল’ গানটিকে বাংলাদেশের রণ সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ উদ্যোগে চির বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারতের কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পুরোপুরিভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে আনা হয়।১৯৭২-এর ২৫ মে চির বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পালিত হয়। বাংলাদেশ সরকার কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে এবং ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি বরাদ্দ করে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় খরচে তার চিকিৎসা ও অন্যান্য ব্যয় ভার বহনের ব্যবস্থা করে।স্বাধীন বাংলাদেশে কবি নজরুলের জন্মদিনে চির বিদ্রোহী ও অসুস্থ এবং নির্বাক কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে যান জাতির পিতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাতের ছবি পরদিন বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করে। পত্রিকায় অমর এই ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়-‘কবি ও বিপ্লবী

১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। আজ কবির মহাপ্রয়াণ দিবসে প্রাণের অশেষ অঞ্জলিতে তাঁর জীবনের শেষ অভিভাষণ স্মরণ করি।
“যদি আর বাঁশি না বাজে,
আমি কবি বলে বলছি না,
আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম,
সেই অধিকারে বলছি,
আমায় আপনারা ক্ষমা করবেন।
আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন,
আমি কবি হতে আসিনি।
আমি নেতা হতে আসিনি।
আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম,
প্রেম পেতে এসেছিলাম।
সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নিরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।
যেদিন আমি চলে যাব, সেদিন হয়ত বা বড় বড় সভা হবে।
কত প্রশংসা কত কবিতা বেরুবে হয়ত আমার নামে। দেশপ্রেমী, ত্যাগী, বীর, বিদ্রোহী- বিশেষণের পর বিশেষণ,
টেবিল ভেঙে ফেলবে থাপ্পর মেরে, বক্তার পর বক্তা।
এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের শ্রাদ্ধ দিনে বন্ধু তুমি যেন যেও না।
যদি পার চুপটি করে বসে আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্মরণ করো।
তোমার ঘরের আঙিনায় বা আশেপাশে যদি একটি ঝরা পায়ে পেষা ফুল পাও,
সেইটিকে বুকে চেপে বলো বন্ধু আমি তোমায় পেয়েছি।
তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।
নিশ্চল নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।”

💻লেখক: এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD