ছবি: সংগৃহীত
নিউজ ডেস্কঃ
‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, বীমা হোক সবার’ এই শ্লোগানে পালিত হচ্ছে জাতীয় বীমা দিবস। বীমা দিবসে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ সোমবার (১ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় বীমা খাতে বিশেষ অবদানের জন্য চারজনকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমার আওতায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও সনদ দেওয়া হয়।
বীমায় যেন কোনো দুর্নীতি না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীমা হল সেবা দেওয়া। এক্ষেত্রে গ্রাহকের স্বার্থকেই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। বীমার টাকা যেন গ্রাহকেরা ঠিকমতো পায়, সেজন্য বিমা কোম্পানিগুলোকে কাজ করতে হবে।
সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা চালু করেছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে ১৬ লাখের বেশি প্রতিবন্ধী শিশুকে বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ হিসেবে সরকার চালু করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্যবীমা। বঙ্গবন্ধু ক্রীড়া প্রেমী ছিলেন, তাই তার প্রতি সম্মান জানাতে বঙ্গবন্ধু স্পোর্টসম্যান ইন্স্যুরেন্স চালু করা হয়েছে। এ ছাড়াও চালু করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা। বীমাটির মেয়াদ হবে এক বছর। এ সময়ে যদি কোন গ্রাহক মাত্র ১০০ টাকা প্রিমিয়ামে বীমা করেন তবে তাকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
এ ক্ষেত্রে সাধারণ বীমা গ্রাহকদের বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৬ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর। আর গার্মেন্টস শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর। এককালীন বীমার প্রিমিয়াম ১০০ টাকা। কাভারেজ দুই লাখ টাকা। বীমার আওতায় আসা গ্রাহকের দুর্ঘটনায় ছয় মাসের মধ্যে মৃত্যু হলে তার ওয়ারিশদার দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। আঘাতের ছয় মাসের মধ্যে দুটি চোখ, কিংবা দুটি হাত, দুটি পা হারালে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এছাড়াও একটি হাত, একটি পা কিংবা একটি পা ও একটি হাত সম্পূর্ণ হারালে গ্রাহক দুই লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ পাবেন। একইভাবে আঘাতের ছয় মাসের মধ্যে একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে গেলে গ্রাহক এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। একইভাবে একটি হাত কিংবা একটি পা হারালে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এছাড়াও আঘাতের কারণে বীমা করা ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে কর্মাক্ষম হলে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।
দেশে প্রতি হাজারে জীবন বীমা আছে মাত্র চারজনের। বাংলাদেশের মোট দেশজ আয়ের মাত্র দশমিক ৫৫ শতাংশ বীমা খাতের প্রিমিয়াম আয়। যেখানে ভারত ৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ২ শতাংশ, ফিলিপিন্সে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
দেশে জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা মিলিয়ে ৭৮ কোম্পানি কাজ করলেও জিডিপিতে এ খাতের অবদান খুবই সামান্য। দেশে বীমার পেনিট্রেশন বাড়েনি। এর অন্যতম কারণ অনেক বীমা কোম্পানি থাকলেও এখানে বাজার সেভাবে উন্মুক্ত হয়নি। কর্পোরেট সুশাসন, অদক্ষ মানবসম্পদ, বীমা পণ্য ও সম্পদ দায়ের ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে এখনও। ফলে বীমাশিল্প থেকে আর্থিক খাত প্রত্যাশিত সুফল পাচ্ছে না। সার্বিক আর্থিক খাত বিশেষ করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পরিসর বাড়াতে বীমা খাত যতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে তা এখানে হচ্ছে না।
২০১৪ সালে জাতীয় বীমা নীতি করা হলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সব মানুষ এবং সম্পদকে বীমার আওতায় আনার রূপকল্প রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বীমা ব্যবসা এখনও সঞ্চয়কেন্দ্রিক। ঝুঁকিভিত্তিক বীমা বিশেষ চালু হয়নি। ২০১৮ সালে জীবন বীমা ব্যবসায় চলমান পলিসির সংখ্যা ছিল এক কোটি এবং সাধারণ বীমায় ২৮ লাখ। জীবন বীমায় ওই বছর ১৮ লাখ গ্রাহক নতুন পলিসি নেন। দেশে পরিবহনের সংখ্যা ৩৫ লাখ হলেও মোটর বীমা পলিসির সংখ্যা ১৬ লাখ। সহজ ও স্বচ্ছ ধারণা দেয়া গেলে সাধারণ মানুষ জীবন বীমা, স্বাস্থ্য বীমাসহ সম্পত্তির বীমা করবে।
Leave a Reply