লোকমান হোসেন পলা।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের ৭৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শনিবার বিকেলে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রী উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ। আয়োজক ছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নৌকা প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরী।
ওই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা পেয়েছেন ওই ইউনিয়নের জামায়াতের আমির মো. তাজুল ইসলাম। যিনি জ্বালাও-পোড়াও মামলায় আসামি হয়ে একাধিকবার জেল খেটেছেন। প্রধান অতিথির কাছ থেকে তিনি সংবর্ধনার ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া বুঝে নেন। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
তবে এ নিয়ে বিব্রত সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে রবিবার বিকেলে তিনি বলেন, এর দায়ভার আয়োজকদের নিতে হবে। আমি জানতাম না অন্যদের সঙ্গে এ ধরনের কাউকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছি এমন হয়ে থাকলে যেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকেই তাঁর নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। নইলে আমাদের নানাভাবে বিব্রত হতে হবে।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শরীফপুর ইউনিয়ন কমান্ডের পক্ষে কমান্ডার ফয়েজ আহমেদ ফুল মিয়া ও ডেপুটি কমান্ডার এ কে এম সাদির এক প্রতিবাদপত্রে অনুষ্ঠান নিয়ে যারা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। তবে জামায়াত নেতার সংবর্ধনা নেওয়া বিষয়ে প্রতিবাদপত্রে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানানো হয় ওই প্রতিবাদপত্রে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ওই ইউনিয়নের ৭৪ জনকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রয়াত ৪৩ জন ও ৩১ জন জীবিত। প্রয়াতদের পরিবারের সদস্যদের কাছে সংবর্ধনার ক্রেস্ট ও ফুল তুলে দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ।
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তরুণ শিল্পপতি মো. বিল্লাল ভূইঁয়া। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ফয়েজ আহমদ ফুল মিয়া, এ কে এম ছাদির, মো. ছানাউল্লাহ, তাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান হাফ মিয়া, ইউপি সদস্য মো. ইকবাল হোসেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোজ্জামেল হক তপন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক রায় ভৌমিক, আশুগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সদস্য মো. সাজিদুল ইসলাম সাচ্চু প্রমুখ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সংবর্ধিত তাজুল ইসলাম পেশায় হোমিও চিকিৎসক। একই সঙ্গে তিনি শরীফপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির। কয়েক বছর আগে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেঁড়ার অভিযোগে হওয়া মামলায় তিনি জেলও খাটেন। এ ছাড়া নাশকতা করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। যে কারণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
Leave a Reply