ফাইল ছবি
নিউজ ডেস্কঃ
সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম হুসেনই মুহম্মদ এরশাদের নাম মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের খুনি হিসেবে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে গ্রেফতারের পর হত্যা করা হয়। ৩৯ বছর আগের চট্টগ্রামে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলা থেকে এইচএম এরশাদ ও মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফকে অব্যাহতি দিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
তাদের মৃত্যু হওয়ায় মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূইঞা ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শমসেরকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি।
ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলারা আলো চন্দনার আদালতের এ সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন। গতকাল শুক্রবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার নুর মোহাম্মদ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ১২ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এই সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আগামী ২৫ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটির শুনানির জন্য দিনধার্য রয়েছে।
২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আসাদুজ্জামান খান রচি মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন। আবেদনের শুনানিতে তিনি বলেন, তিন যুগ আগের এ মামলায় সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। ফলে আরো অনেককে সাক্ষী করা যায়নি। প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য মামলাটি অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।
আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে মঞ্জুরের নেতৃত্বে এক সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রামে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার স্টাফ (জিওসি) ছিলেন আবুল মঞ্জুর।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়ার পথে মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে আটক করে পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২ জুন তাকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং মৃত্যুর সনদপত্র পেতে দেরি হওয়ায় ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। ১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
দীর্ঘ ১৯ বছর মামলাটি বিভিন্ন কারণে ঝুলে ছিল। বর্তমান সরকারের ‘নাচের পুতুল’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টি একটু বেঁকে বসলেই এরশাদকে মঞ্জুর হত্যা মামলা কোর্টে নেয়ার পারোক্ষভয় দেখানো হতো। এই বিচার চলাকালে পর্যায়ক্রমে ২২ বিচারক বিচারিক কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। বিভিন্ন কারণে তারা সবাই বদলি হন।
২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি মামলার ২৩তম বিচারক ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আক্তার ওই বছর ১০ ফেব্রæয়ারি আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষণার দিনধার্য করেন।
২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এ মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। ওই সময় মামলার প্রধান আসামি জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বাকি দুই আসামি মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভ‚ইঞা উপস্থিত ছিলেন। মামলার চার্জশিটভুক্ত অপর দুই আসামি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শমসেরের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত থাকে।
মামলায় মোট ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন প্রধান আসামি সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর সমর্থনে আদালতে লিখিত বক্তব্যও দাখিল করেন তিনি। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই তিনি ইন্তেকাল করেন।
Leave a Reply