লোকমান হোসেন পলা।।
ইতিহাসকে ছুয়ে দেখার জন্য গিয়েছিলাম মুর্শিদাবাদে। বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দোলা, মীর জাফর, ঘষেটি বেগম তথা রাজনীতি, বিশ্বাসঘাতকতা, ক্ষমতার উত্থান-পতন সবই রয়েছে মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে। এর মধ্যে অন্যতম মুর্শিদকুলি খান নির্মিত কাটরা মসজিদ। মুর্শিদাবাদ রেলস্টেশনের দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে এই মসজিদটি অবস্থিত। কাটরা মসজিদের প্রবেশ বেদীর নিচে একটি ছোট্ট ঘরে রয়েছে মুর্শিদকুলি খান এর সমাধি। এটি নবাব মুর্শিদকুলি খান এর ইচ্ছা অনুসারে করা হয়। তিনি তার জীবনে কৃত পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন এবং তিনি এমন এক স্থানে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন, যেখানে তিনি মসজিদে প্রবেশকারী পূন্যবান লোকেদের ঠিক পায়ের নিচে নিষ্পিষ্ট হবেন এবং তাদের পদস্পর্শ পাবেন।
নবাব মুর্শিদকুলি খান ঢাকা থেকে ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত করেন। তাঁর নামানুসারে নতুন রাজধানীর নাম হয় মুর্শিদাবাদ। কাটরা মসজিদটি নতুন রাজধানীর জামে মসজিদ হিসেবে তৈরী করা হয়। সম্পূর্ণ মসজিদটি আকারে চতুর্ভূজাকৃতি, পুরো মসজিদটিতে অনেক সুদৃশ্য খিলান রয়েছে । মসজিদের সামনের দিকে রয়েছে বহুভাঁজযুক্ত খিলানের মধ্যে পাঁচটি প্রবেশ খিলান। মসজিদটি আয়তাকৃতির পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট(পরিমাপ ৩৯.৬২×৭.৩২ মিটার)। এটি ইঁট দিয়ে তৈরি এবং চারকোনায় চারটি বিশাল মিনার অবস্থিত। বর্গাকার প্রাঙ্গণের চার কোণে রয়েছে চারটি মিনার, মিনারগুলোর আকৃতি অষ্টাভূজাকৃতি এবং বুরুজগুলি সরু হয়ে ওপরের দিকে উঠে গেছে; মিনারের ভিতর একটি প্যাঁচানো সিঁড়িপথ আছে যেটি বুরুজের ওপর অবধি উঠে গেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র উত্তর-পশ্চিমে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের দুটি পার্শ্ব মিনার অবশিষ্ট আছে। মিনারগুলো ৭০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এবং চওড়ায় প্রায় ২০ ফুট । উঁচু মিনারগুলো কালের আবর্তে আজ জরাজীর্ণ, মিনারের গম্বুজগুলো ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেগুলি রক্ষনাবেক্ষন চলছে।এর সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হল এগুলোতে বন্দুক রাখার জন্য গর্ত রয়েছে।
মসজিদটির নিকটে একটি বাজার ছিল এবং কাটরা মানে হচ্ছে বাজার । কাজেই সম্পূর্ন অর্থ করলে দাড়ায় কাটরা মসজিদ বা বাজার মসজিদ বা বাজারে অবস্থিত একটি মসজিদ । তো সময় দেখে নিন ঐতিহাসিক কাটরা মসজিদটিকে।
Leave a Reply