বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে কসবায় রাতের আঁধারে চলছিল পাহাড় কাটা
রাঙামাটি পুরুলিয়ার ‘সিজানো পরব’

রাঙামাটি পুরুলিয়ার ‘সিজানো পরব’

– দীপক সাহা ( পশ্চিমবঙ্গ)

আজ “বাসি ভাতের পরব” রাঙামাটি পুরুলিয়ায়। সরস্বতী পুজোর দিন রান্না করে পরের দিন তা বাসি করে খেতে হয়। বহু বছর ধরে চলে আসা সাবেক মানভূমের এই নিয়মকে “সিজানো”পরব বলা হয়।

এই সিজানো পরবে নয় রকম ডাল, নয় রকম সবজি এক সঙ্গে সেদ্ধ করে পরের দিনের জন্য রেখে দেওয়া হয় বাসি করে খাবার জন্য। এ ছাড়াও বিভিন্ন রকম ভাজা,সবজি,চাটনি,সহ মাছের বিভিন্ন রকম পদ রান্না করা হয় শুধু মাত্র বাসি করে খাবার জন্য। আবার এই বাসি খাবার খাওয়ারও নিয়ম রয়েছে। এদিন শীল এবং নোড়াকে দেবী ষষ্টি রূপে পুজো করা হয়। কোনও বাড়িতে এদিন উনুন জ্বলবে না। হবে না রান্না। খাওয়া চলবে না গরম খাবার।

আগের দিনের রান্না করা খাবার পরের দিন পঞ্জিকা মতে দেবী ষষ্ঠীর পুজো করে তা খেতে হয়। শুধু তাই নয় বাসি ঘর, বাসি জল,বাসি ফুল দিয়ে বাড়ির রান্নার কাজে ব্যবহৃত শীল নোড়াকে দেবী রূপে পুজো করা হয়। বাসি ভাত খাওয়ার জন্য আত্মীয় বন্ধুদের এদিন নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়। আর বাসি ভাতের পরব উপলক্ষে পুরুলিয়ার দোকান বাজার রাস্তা ঘাট বন্ধের চেহারা নেয়।

“সিজানো” উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন স্থানে সিজানো মেলা বসে। তবে জেলার সব থেকে বড় মেলা হয় রঘুনাথপুরের জয়চন্ডী পাহাড়ের সিজানো পাহাড়ে। রঘুনাথপুর শহরের নন্দুয়াড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় মেলায়।

এই মেলার সব থেকে আশ্চর্যজনক ঘটনা পাহাড়ের উপরে অবস্থিত কালীমন্দিরে হাজার হাজার মানুষ নারকেল ফাটিয়ে সেই জল শিব ঠাকুরের মাথায় উৎসর্গ করেন। আর তার ফলে সেই নারকেলের জলের ধারা পাহাড়ের উপর থেকে নীচে নেমে প্রায় একটি পুকুর ভর্তি হয়ে যায়। আর তা দেখার জন্য এদিন জেলার ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে পাশ্ববর্তী ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী আসেন এই মেলায়।

উৎসব থাকলে উপলক্ষ থাকবেই। আর সেই উপলক্ষে গড়ে ওঠে একটি মিথ বা কাহিনীকে ঘিরেই। সরস্বতী পুজোর পরের দিন পুরুলিয়াবাসীর সিজানো বা বাসিভাত পরবের নেপথ্যেও রয়েছে এমনই এক আকর্ষণীয় লোককথা। আর সেই লোককাহিনীর সূত্র ধরেই বছরের পর বছর এই পরব পালিত হচ্ছে পুরুলিয়া জেলাজুড়ে। লোক কথায় শোনা যায়, কোনও এক সময় এক রাজার ছেলেরা জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে ষষ্ঠী দেবতার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। দিনটা ছিল সরস্বতী পুজোর আগের দিন। কোন এক কারণে রাজপুত্রদের ওপর ষষ্ঠী দেবীর ভীষণ রাগ হয়। রাগে ষষ্ঠীঠাকুর রাজপুত্রদের প্রাণ হরণ করে নেন। সারা দিনরাত ছেলেরা বাড়ি না ফেরায়, রাজা-রাণী জঙ্গলে যান সন্তানদের খোঁজে। সেদিন ছিল সরস্বতী পুজো। রাজা-রাণীকে পরীক্ষা করতে ষষ্ঠীদেবী জরাগ্রস্ত বৃদ্ধার রূপ ধারণ করে একটি গাছের তলায় বসে থাকেন। সেই সময় তার কাছে গিয়ে সন্তানদের খোঁজ করেন রাজা-রাণী। বৃদ্ধা তাঁদের বলেন, তাঁর সারা পায়ে পুঁজ জমেছে, রাণী তা চেটে পরিস্কার করে দিলে, রাজপুত্রদের সন্ধান বলে দেবে সে। সন্তানদের ফিরে পাওয়ার আশায় রাণী বৃদ্ধার দেহের সমস্ত পুঁজ চেটে পরিস্কার করেছিলেন। আর তা দেখে খুশি হয়ে ষষ্ঠীদেবী নিজের রূপ ধারণ করে রাজপুত্রদের ফিরিয়ে দেন।

সরস্বতী পুজোর পরদিন রাজা-রাণী সন্তানদের নিয়ে রাজ্যে ফিরে এলে প্রজারা উৎসবে মাতেন। সেদিন কারও বাড়িতে রান্না হয়নি। সবাই বাসি খাবার খান। ষষ্ঠীদেবীও মানুষকে বলেন, সরস্বতী পুজোর পর দিন যারা বাসি খাবার খাবে, তাদের পরিবারে শোক থাকবে না। বাসি ভাতের পরব সেই থেকেই শুরু হল। আর সেই লৌকিক কথা মেনেই পুরুলিয়ার মানুষ সরস্বতী পুজোর দিন ঘরে ঘরে ষষ্ঠীঠাকুর পেতে ভাত-মাছ-সবজি রান্না করেন। পুজোর পরদিন গ্রামে গ্রামে মহিলারা কোনও এক জায়গায় জড়ো হন। সেখানে এক বয়স্ক মহিলা রাজপুত্রদের উপ-কাহিনীটি সকলকে শোনান। ষষ্ঠী কাহিনী শুনতে যাওয়ার সময় মহিলারা পেতলের ঘটিতে জল, হলুদ নিয়ে যান। সঙ্গে থাকে বাঁশপাতা। কাহিনী শোনার পর বাড়ি ফিরে ঘটির জল, বাঁশপাতা দিয়ে ঘরে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্বাস, তাতে বাড়িতে চির শান্তি বিরাজ করে।

আজকের দিনটিকে অরন্ধন দিবস বলা হয়। কারণ আজ জেলার নব্বই শতাংশ বাড়িতে রান্না হয় না। সকলেই বাসি খাবার খান। এর একটি বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, এই যে সরস্বতী পুজো আগে ঠিক বসন্তর প্রাক মুহূর্তে হয়। বসন্ত কালে বসন্ত রোগ বা পক্স রোগ দেখা দেয়। তাই মশলাদার খাবার না খেয়ে বাসি খাবার বা সেদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এই বিষয়টাই বোঝানোর জন্য বহু কাল আগে বিভিন্ন শাক সবজি, ডাল, মাছ সরস্বতী পুজো বা বসন্ত পঞ্চমীর দিন রান্না করে পরের দিন বাসি করে খাবার প্রথা চালু হয়।

বসন্ত কালের আগমণ জানান দেওয়া বেশি মশলা যুক্ত খাবার না খাওয়া এবং গুটি বসন্ত রোগ থেকে বাঁচতে মানভূমের পূর্ব পুরুষরা এই নিয়ম চালু করেছিলেন। যা আজ পুরুলিয়ায় ‘সিজানো পরব’ নামে পরিচিত। শীল নোড়াকে দেবী ষষ্ঠী রূপে পুজো প্রসঙ্গে ধার্মিক কারণ থাকলেও মূলত আগের দিনের একান্নবর্তী পরিবারের এক সাথে থাকা খাওয়া গল্প গুজব করার যে নিয়ম ছিল সেই বার্তা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আজ বাসি ভাতের পরব ঘিরে পুরুলিয়ার প্রতিটি প্রান্ত জমজমাট।

ছবি ঋণ – আন্তর্জাল

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD