নিডস নিউজ ডেক্সঃ
চলমান করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই রেলের ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ভাড়া বৃদ্ধি-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও চূড়ান্ত করেছে। ওই প্রস্তাবে যাত্রীবাহী ট্রেনের সব রুটেই নন-এসি আসনে গড়ে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। আর এসি চেয়ার ও বার্থে ভাড়া বাড়বে রুটভেদে ৪৩ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন ভাড়া কার্যকর হলে বিভিন্ন রুটে এসি বার্থের ভাড়া হবে বিমান ভাড়ার কাছাকাছি বা তার চেয়েও বেশি। পাশাপাশি ২০ শতাংশ হারে পণ্যবাহী ও কন্টেইনারবাহী ট্রেনের ভাড়া বাড়নোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া কন্টেইনারবাহী ট্রেনে প্রদত্ত রেয়াতি সুবিধাও ২৫ শতাংশ কমানো হচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে চলাচলরত আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রী ভাড়া সর্বশেষ ২০১৬ সালে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। মূলত বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি, অপারেশন ব্যয় বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রেলওয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রতি বছরই ভাড়া বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে। কারণ গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেলওয়ের জ্বালানি ব্যয়, বেতন-ভাতা ও রক্ষণাবেক্ষণ যথাক্রমে গড়ে ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধাপে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে রেলের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি ভাড়া ৩৯ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ৪৯ পয়সা। ইতিপূর্বে প্রায় ২০ বছর পর ২০১২ সালের ১ অক্টোবর রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়। ওই সময়ে রেলের যাত্রী পরিবহনের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি ভাড়া ২৪ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ পয়সায় উন্নীত করা হয়েছিল। ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলেও বিভিন্ন রুটে থাকা ডিসকাউন্ট তুলে দেয়ায় ভাড়া বেড়েছিল প্রায় শতভাগ। তাছাড়া ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে রেলওয়ে আরেক দফা ভাড়া বাড়ায়। ওই সময় কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি ভাড়া ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৯ পয়সায় উন্নীত করা হয়।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি রেলভবনে অনুষ্ঠিত রেলের ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত এক বৈঠকে নতুন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসি ( শোভন চেয়ারে) ভাড়া ৩৪৫ টাকা। ওই রুটে নতুন ভাড়া ৪৩২ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ২৫ দশমিক ২২ শতাংশ। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের এসি বার্থের বর্তমান ভাড়া এক হাজার ১৭৯ টাকা। ওই ভাড়া বাড়িয়ে এক হাজার ৯৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে ভাড়া বাড়ছে প্রায় ৬৮ শতাংশ। একইভাবে ঢাকা-সিলেট রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসির ভাড়া ৩২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৬১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ৯৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই রুটের এসি বার্থের ভাড়া বাড়ছে প্রায় ৭৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। তাছাড়া ঢাকা-রাজশাহী রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসির ভাড়া ৩৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ১০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ১৭৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৮৪০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ঢাকা-দিনাজপুর রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসি ভাড়া ৪৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৮২ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৮৯২ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৩০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ৫৯৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৪৩০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসির ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৮৮ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া এক হাজার ৫৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ৮৯২ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৬৯০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তার বাইরে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট ও ঢাকা-খুলনা রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসি ভাড়া ৫০৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৩২ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৬৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে এক হাজার ৪৪০ টাকা এবং ঢাকা-খুলনা রুটে এক হাজার ৩৯০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-লালমনিরহাট রুটের এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ৭৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৫৬০ টাকা এবং ঢাকা-খুলনা রুটে এক হাজার ৭৩১ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৫৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিভিন্ন ট্রেনের ন্যূনতম ভাড়া বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়।
Leave a Reply