লোকমান হোসেন পলা।।
বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার তত্কালীন রাজধানী মুর্শিদাবাদে শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ্দৌলার একমাত্র স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা এটি। বাংলার ইতিহাস ও নবাব সিরাজের স্মৃতিবিজড়িত মুর্শিদাবাদ ভ্রমণে যাওয়া মানুষকে এখন শুধু সিরাজ মদীনা দেখেই মনের খোরাক মেটাতে হয়। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী তীরের পলাশীর প্রান্তরে মীর জাফরের বেঈমানিতে পরাজিত হয়ে স্বাধীনতা হারায় সমগ্র বাংলা। পরবর্তীতে ইংরেজদের সম্মতিতে মসনদে বসেন মীর জাফর আলী খান। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের স্মৃতি বিজড়িত সবকিছু মুছে ফেলেন ইংরেজদের গোলাম মীর জাফর।
সেসময় ও পরবর্তীতে মুর্শিদাবাদে ইংরেজ ও জমিদারদের পরিকল্পনায় গড়ে ওঠে নানা স্থাপনা।
সেখানে এখনো মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাঠগোলা মিউজিয়াম প্যালেস, মীর জাফরের বাড়ি নিমকহারাম দেউড়ি, নশিপুর জমিদার বাড়ি, জাফরাগঞ্জে মীর জাফর ও তান বংশধরদের ১১০০ সমাধি, ইতিহাসের খলনায়ক জগত্শেঠের বাড়ি, হাজারদুয়ারি প্যালেস, ইমামবাড়াসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কিন্তু মুর্শিদাবাদে শিকড়ের সন্ধানে যাওয়া মানুষ শুধু খুঁজতে থাকে নবাব সিরাজের স্মৃতি। যখন কিছুই পাওয়া যায় না, তখন হাজারদুয়ারি প্যালেস চত্বরে উঁকি দেয় সিরাজ মদীনা মসজিদ। এই সিরাজ মদীনা ছাড়া গোটা মুর্শিদাবাদে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের অস্ত্বিত খুঁজে পাওয়া দায়। আর যা আছে তা হলো খোসবাগে নবাবের সমাধি। হাজারদুয়ারি প্যালেসের বিশাল চত্বরের মাঝখানে ছোট্ট সিরাজ মদীনার অবস্থান। সিরাজউদ্দৌলার মা আমিনা বেগম প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সিরাজ মসনদে বসলে মসজিদ বানাবেন। মায়ের প্রতিজ্ঞা পূরণে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পবিত্র মদীনার কারবালা থেকে মাটি এনে তৈরি করেন সিরাজ মদীনা। ছোট্ট সিরাজ মদীনা মসজিদ।
বহুমূল্যবান রত্ন দ্বারা এর দরজা প্রস্তুত করবে।
দরজার বেদির উত্তর থেকে দক্ষিণ চার হাত, প্রস্ত এক হাত ও গভীরতা দেড় হাত। মীরকাসিম নবাব হলে তিনি মুঙ্গেরে রাজধানী স্থাপন করেন। তখন এর ধনরত্ম তিনি মুঙ্গেরে নিয়ে যান।
সবসময় বন্ধ থাকলেও খুলে দেওয়া হয় মহররমের দিন।
সিরাজ মদীনার চারপাশ হাজার দুয়ারী থেকে আলাদা করতে মাটিতে ইটের বেষ্টনী দেওয়া আছে। স্থানীয় গাইডরা সিরাজ মদীনার ইটের বেষ্টনীতে প্রবেশ করে বেশ নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলেন, এই আমি, স্বাধীন বাংলায় নবাব সিরাজের জায়গায় প্রবেশ করলাম। বেরুলেই পায়ে পরবো শিকল, হবো পরাধীন, ইংরেজদের দাস। এই সিরাজ মদীনা ছাড়া মুর্শিদাবাদে নবাব সিরাজের আর কোনো স্মৃতি নেই।
কিভাবে যাবেন:—
শিয়ালদা থেকে লালগোলাগামী যে কোনও ট্রেনই মুর্শিদাবাদ যায়। দূরত্ব ১৯৫ কিলোমিটার। ভাড়া ৫০ থেকে ৭৫ টাকা, সময় লাগে ৫ঘন্ট। ভাগীরথী,
হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস, লালগোলা লোকাল সহ আরো অনেক ট্রেন রয়েছে শিয়ালদা থেকে মুর্শিদাবাদ য়ায়। এছাড়া
ও কলকাতা টার্মিনাল ষ্টেশন বাস ছেড়ে।
গঙ্গার ওপারে আজিমগঞ্জ জংশন এ নেমে নৌকায় এপারে আসা যাবে. কলকাতার শহিদমিনার থেকে প্রচুর সরকারি ও বেসরকারি বাস যাচ্ছে বহরমপুর। সকাল থেকে ১ঘন্টা অন্তর । সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। বহরমপুর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মুর্শিদাবাদের লালবাগ। মুর্শিদাবাদে ষ্টেশন থেকে লালবাগ ও হাজারদুয়ারি আসতে হবে রিকশায় ভাড়া ৬০ টাকা টাঙা ৮০ টাকা।মুর্শিবাদ রেল স্টেশন থেকে অটো রিকসা বা ঘোড়ার গাড়ি করে মুর্সিবাদের ঐতিহাসিক স্থান গুলো দেখতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় হয়ে যাবে।
কোথায় থাকবেন:—
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পর্যটক উন্নয়ন নিগমের বহরমপুর ট্যুরিস্ট লজ ভাড়া ১,৫০০ টাকা। এছাড়া অনেক হোটেল আছে, হোটেল রেমন্ড,ফেন্টাসি হোটেল,ভাই ভাই হোটেল,ফ্রেন্ড হোটেল,হোটেল মঞ্জুসা,হোটেল রাজলক্ষ্মী,হোটেল যাত্রীক,হোটেল অনুরাগ,প্রিয়ঙ্কা হোটেল রেস্টুরেন্ট,হোটেল আপায়ান, ইতাদি .সব হোটেল মোটামুটি ৫০০ টাকা থেকে ৩০০০টাকা পর্যন্ত।
Leave a Reply