বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে
হলুদবিহার, বদলগাছী, নওগাঁ

হলুদবিহার, বদলগাছী, নওগাঁ

ড.মোহাম্মদ শামসুল আলম।।

বদলগাছী উপজেলাধীন বিলাসবাড়ি ইউনিয়নের দ্বীপগঞ্জ রাজার সংলগ্ন উঁচু একটি ঢিবি আছে, এটি এতদ্ অঞ্চলে হলুদবিহার নামে পরিচিত। হলুদবিহার সোমপুর মহাবিহার থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে এই প্রত্নস্থাপনার দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকে। বিহারের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে পাকারাস্তা আছে। যে কোনো যানবাহনে স্থানটিতে সহজে গমনাগমন করা যায়। পাহাড়পুর মহাবিহার থেকে সরাসরি দক্ষিণে পাকাসড়ক দিয়ে ভাণ্ডারপুর হয়ে কোলাবাজার অতিক্রম করে সড়কপথে দ্বীপগঞ্জে পৌঁছা যায়। আবার বদলগাছী উপজেলা থেকে সরাসরি কোলা হয়ে বিহারে অনায়াসে আসা যায়। হলুদবিহার মৌজা থেকে একটি রাস্তা উত্তরদিকে কোলাবাজার অতিক্রম করে পাহাড়পুরের দিকে এগিয়েছে। সেপথ দিয়ে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর হয়ে জগদ্দল মহাবিহারে গমন করা যায়। অপর একটি সংযোগসড়কে পাহাড়পুর থেকে পশ্চিমে পত্নীতলা উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নে অবস্থিত পালদের রাজধানী শহর রামাবতী নগরীতেও গমন করা যায়। আবার জেলা শহর নওগাঁ থেকে সরাসরি উত্তর দিকে ১৮ কিলোমিটার দূরতে এই বিহারটির অবস্থান।
ঐতিহাসিক তারনাথের মতে ধর্মপাল বৌদ্ধধর্মের অনুসারীদের জন্য ৫০টি ধর্মবিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরমধ্যে বরেন্দ্রীতে অবস্থিত ছোটো পরিসরের এক বিহারের নাম হলুদবিহার। ইতিহাস যদি এমনটি বলে তাহলে পাহাড়পুরের মহাবিহার বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তুলনীয়, আর হলুদবিহারের তুলনা চলে কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে। আমরা জানি পালরাজাগণ বাংলার শিক্ষাদীক্ষা, শিল্পসাহিত্য রচনা ও সংস্কৃতি-ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করতেন। তারই দৃষ্টান্ত দেখা যায় পাল আমলে তৈরিকৃত অসংখ্য প্রত্নস্থাপনার নিদর্শনসমূহ। এরই প্রমাণ মেলে দ্বীপগঞ্জের হলুদবিহারের ঢিবি ও বিলিয়মান নিদর্শনসমূহের আবেদন। বলা সংগত যে, পাল রাজাদের চারশত বছরের (৭৫৬-১১৬২ খ্রি.) সময়কালের মধ্যে একাধিক রাজা রাজত্ব করেছেন। এই রাজত্বের মধ্যে কোন রাজা হলুদবিহার প্রতিষ্ঠা করেন তার সঠিক ইতিহাস আজও অনুদ্ঘাটিত। তবে একথা বলা যায় যে, হলুদবিহার, পাহাড়পুর মহাবিহার, জগদ্দল মহাবিহার এবং রামাবতী নগরীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র বিরাজমান। সেকারণে বলতে হয় এই বৌদ্ধ স্থাপনাগুলোর সমসাময়িক হিসেবে এই বিহারটির প্রতিষ্ঠা ঘটেছে। স্মর্তব্য যে, এই বৌদ্ধ স্থাপনাগুলোর মধ্যে বহুপূর্ব থেকে সংযোগ ছিল একটির সাথে আরেকটির।

দ্বীপগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশে অবস্থিত হলুদবিহারের উঁচু ঢিবি আজও জনসাধারণে দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। এই বিহারের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে আ.কা.মো যাকারিয়া বলেছেন, হাল আমলে কিছু উৎখনন কার্য করার ফলে একটি দোতলা বিহারের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাই বলা চলে বিহারটি ছিল দ্বিতল বিশিষ্ট স্তূপ। স্তূপ বা ঢিবির পূর্বপাশে দোতালায় উঠানামার জন্য একটি সিঁড়ির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা আজও বিরাজমান। বিহারের তিনদিক নিচুভূমি ও জলাশয় দ্বারা বেষ্টিত থাকার কারণে স্থানীয় লোকজন এর নামকরণ করেছেন দ্বীপগঞ্জ। এটির দক্ষিণ দিক ব্যতীত অপর তিনদিক নিচুভূমি হওয়ার কারণে বর্ষাকালে দ্বীপসদৃশ মনে হয়ে থাকে এই বিহার অঙ্গনটি। স্তূপের পশ্চিম পাশে ছিল একটি প্রাচীন নদীর খাত। যা বর্তমানে আর পূর্বের অবস্থানে নেই। হলুদবিহারের দক্ষিণ-পূর্বদিকে একটি প্রাচীন জলাশয় ছিল। বর্তমানে তা ভরাট হয়েছে, আর এর পাড় হয়েছে নিশ্চিহ্ন। অনুমিত হয় এই জলাশয় ছিল বিহারের জল প্রাপ্তির উৎসমূল। এছাড়াও বিহারের পূর্বদিকে অবস্থিত উঁচুভূমি বর্তমানে চাষের ভূমিতে পরিণত হয়েছে। চাষের ভূমিতে পরিণত হওয়ার প্রাক্কালে প্রাচীন ইট ও ইটের তৈরি ভিত্তিভূমি বা দেয়াল বের হয়। সেখানে চিত্রফলকের পাশাপাশি কড়ি, প্রাচীন ইট ও মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ পাওয়া যায়। বর্তমানে এসব উঁচুস্থানসমূহ বিস্তীর্ণ মাঠে পরিণত হয়েছে। মাঠের কোনো কোনো স্থানে হাল আমলে পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুর খননকালে প্রাচীন কীর্তির ধ্বংসাবশেষ বের হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কতর্ৃক জানা যায়, বর্তমান হলুদবিহার গ্রামের সবটাই একটি প্রাচীন জনপদের ধ্বংসাবশেষের উপর অবস্থিত।

বর্ষাকালে স্তূপের তিনদিকে পানি থই থই করে, ফলে স্তূপটিকে দ্বীপের মতো দেখায়। তখন স্থানটিতে বিরাজমান পল্লিপ্রকৃতির পরিবেশ যেমন মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে, তেমনি নান্দনিক সৌন্দর্যের আবহ তৈরি হয়। ফলে দূর থেকে তাকালে এক অনন্য অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে একজন ইতিহাসজ্ঞ জানান, দ্বীপের প্রান্তদেশে একটি প্রাচীন গঞ্জের অবশেষ রয়েছে। এই ‘গঞ্জ ও দ্বীপ’ নাম দুটি একত্রিত হয়ে ‘দ্বীপগঞ্জ’ নামকরণ হয়েছে। এই স্থাপনার পূর্বদিকে একটি গ্রাম্যবাজার, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি হাইস্কুল ও একটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় অবস্থিত। পরিষদের সম্মুখভাগে গ্রাম্যবাজারটি অবস্থিত। বাজারের অভ্যন্তরেই ছিল একটি বিশাল অবয়বের বটগাছ, যা এখন নেই। এই বটবৃক্ষের নীচে পাওয়া যায় প্রাচীন ইট ও অসংখ্য মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ। বিহারটি এমন বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর হলুদবিহারকে সংরক্ষিত মনুমেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন।

হলুদবিহার গ্রামটি যে প্রাচীনকালে সমৃদ্ধশালী একটি নগরী বা জনপদ ছিল তার প্রমাণ ইতিহাস পাঠে জানা যায়। তাই এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ ও সংশয় নেই। সম্ভবত এখানে বিহারটি ছাড়াও আরও একাধিক স্থাপনা ছিল কথাটিও বলা যায়। যা পাহাড়পুর মহাবিহারের সমসাময়িক না-কি তারও আগের, এমন কথার সঠিক ইতিহাস আজ অনুপস্থিত। তবে এটি যে এককালে একটি সমৃদ্ধ কোনো নগরী বা জনপদ ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, পালবংশের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে বাংলার বরেন্দ্রসহ পূর্ব ভারতের বহুস্থানে বৌদ্ধসংঘ ও কেন্দ্র গড়ে উঠে। এর মধ্যে বরেন্দ্রের সোমপুর মহাবিহার, জগদ্দল মহাবিহার ও হলুদবিহার ছিল বিদ্যাচর্চার প্রাণকেন্দ্র। ১৯৮৪ ও ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রত্নোৎখনন কালের বিবরণে জানা যায় এই বিহারে কাদায় গাঁথা ইট নির্মিত একটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা মাঝারি আকারের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। পূর্বমুখী এ মন্দিরের চারপাশে ছিল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা চত্বর। ঘেরা চত্বরটির অবয়ব আয়তক্ষেত্র বিশিষ্ট।
দ্বিতীয় অংশ
উৎখননকালের বিরবণে উল্লেখ করা হয়েছে এই বিহারের চারপাশে ছিল ছোটোবড়ো আয়তনের ১৫টি পুকুর ও দিঘি। দিঘিগুলোর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। যেবিহারের উত্তর দিকে অবস্থিত দিঘিটি সবচেয়ে বৃহৎ পরিসর নিয়ে অবস্থিত। আবার বিহারের দক্ষিণ দিকে পাকাসড়ক সংলগ্ন ‘মরাদিঘি’ নামের পুকরটি সম্পূর্ণ ভরাট হয়েছে। এখন সেখানে চাষাবাদ হয়। দিঘির অস্তিত্ব আর নেই, কেবল নাম হিসেবে টিকে আছে মরাদিঘির অস্তিত্ব। এছাড়াও বিহারের পশ্চিমাংশে ছিল কল্লামারি নামে প্রায় ৩৩ শতাংশের একটি পুকুর। সে পুকুরের অস্তিত্ব এখন সম্পূর্ণ বিলিন হয়েছে। দ্বীপগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মো: আশরাফুল ইসলাম জানান বর্তমানে ক্ষয়িষ্ণু হলুদবিহার অঙ্গনটি ৯৯ শতাংশ ভূমির উপর অবস্থিত। আর মূলবিহার চত্বরের বহিরাঙ্গে ছিল প্রায় ৮০ বিঘার মতো ভূসম্পত্তি। মূলবিহার ছাড়াও এই অঙ্গনে আরও তিনটি ছোটো পরিসরের বিহার ছিল এমন কথাও জানান জনাব ইসলাম। এমন মন্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় ‘বাঙলাদেশে প্রত্নসম্পদ’ গ্রন্থেও। তবে তিনি এটিও জানান যে, ছোটো পরিসরের বিহারগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এগুলোর নিদর্শন কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। বর্তমানে মূলবিহার ও কয়েকটি দিঘির অস্তিত্ব ছাড়া হলুদবিহার অধ্যুষিত দ্বীপগঞ্জে এখন আর প্রাচীন কোন নিদর্শন নেই কথাটি বলতে হয়। অথচ এককালে ছিল এই অঞ্চলটির কতই না ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

বিহারটির অবয়ব বা আকার আয়তন পূর্বে কেমন ছিল তার সঠিক ইতিহাস হয়তো এখনো সম্পূর্ণ আবিষ্কৃত নয়। তবে ক্রমাগত সংকোচিত হতে হতে বর্তমানে এটি গোলাকার রূপ নিয়ে অবস্থানরত। এমন রূপ পরিগ্রহ করার পর এ ঢিবির পরিধি বর্তমানে ৬৫ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার প্রশস্ত। আর উচ্চতা হিসেবে পাওয়া যায় ১০ মিটার। স্থাপনাটির যে অসম্ভব রকমের ক্ষতি সাধিত হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় পরিদর্শনে এলে। বিশেষত স্থাপনার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় বসতবাড়ি নির্মাণের ফলে ঢিবির অভ্যন্তরীণ যে দেয়াল ছিল তা নিশ্চিহ্ন হওয়ার চিত্র পরিদৃশ্যমান হয়। এছাড়াও ঢিবির কিছু অংশবিশেষ সমান করার কারণেও স্থাপনাটির অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে এমন বিষয় গোচরীভূত হয়।

বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ববিভাগ অনুসন্ধান ও জরিপ চালিয়ে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছেন এটি একটি বৌদ্ধবিহার। এই বৌদ্ধবিহারটি পাহাড়পুর মহাবিহারের সমসাময়িক বৌদ্ধ রাজাদের হাতে নির্মিত বলে অনুমিত হয়। অবশ্য এ নিয়ে ভিন্ন অভিমত ও মতপার্থক্য পাওয়া যায়। স্থাপনাটি সম্পর্কে ‘রাজশাহীর ইতিহাস’ গ্রন্থের লেখক জানান, ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে এ ঢিবি থেকে কালপাথরের তৈরি একটি বুদ্ধমূর্তির একাংশ ও কয়েকটি পোড়ামাটির চিত্রফলক আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত মৃৎফলগুলোর মধ্যে রাজহংসের ফলকটি অন্যতম। গঠনশৈলীর দিক থেকে রাজহংসের মৃৎফলকটি ছিল যেমন নান্দনিক, তেমনি সুন্দরের দিক থেকে আকর্ষণীয় ও কারুকার্যময়। ফলকটি তৎকালীন সময়ের অপূর্ব শিল্প নৈপুণ্যের পরিচয় বহন করে। মৃৎশিল্পের উপকরণের সাথে স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায় এমন কথার উল্লেখ আছে। স্বর্ণমুদ্রার পাশাপাশি প্রাচীনকালের মুদ্রা পাওয়ার কথাও জানান ইতিহাসজ্ঞ কাজী মোহাম্মদ মিছের। এছাড়াও আরও যেসব উপকরণ পাওয়ার কথা জানা যায় সেগুলো হলো পোড়ামাটির গহনাগুটিকা, পোড়ামাটির খেলনা, চার পংক্তি ভাষ্য বিধৃত একটি গোল পোড়ামাটির ফলক, কিছু মৃৎপাত্র, দুটি ক্ষুদ্রাকার পাথরের নিদর্শন, ৩টি লোহার পেরেক, ৪টি লোহার ঠুকরা প্রভৃতি উল্লেখ্য। ফলে ঐতিহ্যখ্যাত দ্বীপগঞ্জ বাজারের সন্নিকটে অবস্থিত হলুদবিহার স্থাপনাটি নবম ও দশম শতকের একটি বর্ধিঞ্চু অমুসলিম প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে কালের স্বাক্ষর বহন করে। আরও জানা যায় হলুদবিহার স্থাপনাটি ১৯৩০-৩১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন ভারতের ‘অঝও’ বা ‘ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ’ কর্তৃক জরিপকার্য চালানোর পর ছোটো আকারে তৈরিকৃত একটি গণেশ মূর্তি (খ্রি. নবম শতক) আবিষ্কার করেন। মূর্তিটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায় কর্তৃক সমভাবে পূজনীয়। এটি নির্মিত হয় ব্রঞ্জের তৈরি উপকরণ দিয়ে।

আ.কা.মো যাকারিয়া বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের জরিপে পর তিনটি ঢিবির অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়। তিনি ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে পরিদর্শনে এসে সেই তিনটি ঢিবির অস্তিত্ব দেখতে পাননি। এমন তথ্যের সূত্রে অনুমিত হয় ঢিবি থেকে ইট সরিয়ে ঢিবিগুলোকে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। তারই নিদর্শন দেখা যায় বাজার অংশে ছিন্নবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য প্রাচীন ইট ও মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশগুলো। এমন কি বিহারের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে অবস্থিত বাজারের সম্প্রসারণ ঘটেছে বিহারাংশে। বিহারের দক্ষিণ ও পূর্বপাশ ঘেষে অসংখ্য দোকানও তৈরি হয়েছে। যা পরিদর্শনে এসে সহসায় নজরে পড়ে।
বিহারটি খননকালে অনেক বুদ্ধমূর্তি ও মৃৎফলক পাওয়া যায়। প্রত্নবিভাগ খননকালে যে তথ্য উদ্ধার করেছে তা এমন-‘পাহাড়পুরের প্রত্ননিদর্শনের সাথে এখানে প্রাপ্ত নিদর্শনের সাদৃশ্য আছে। এটিকে মাঝারি আকারের রাজবাড়ি বলেও অনেকে মনে করেন। কতিপয় স্থানীয় প্রবীন ব্যক্তিত্ব লেখককে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে জানান তারা তাদের পূর্বপরুষের কাছে শুনেছেন এটি একটি রাজবাড়ি ছিল। আবার কেউ কেউ এটিকে পাহাড়পুরের সমসাময়িক বলেও মনে করেছেন। তবে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের অনেক পরে এটি নির্মিত বলে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক, গবেষক ও ইতিহাসজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ মনে করে থাকেন। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে ব্যবহৃত ইটের সাথে হলুদ বিহারে ব্যবহৃত ইটের মধ্যে আয়তনগত দিক ও দৈর্ঘ্যপ্রস্থের কোনো মিল নেই।

ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম
গবেষক, প্রাবন্ধিক, ইতিহাসজ্ঞ
এবং
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, নওগাঁ সরকারি কলেজ, নওগাঁ

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD