রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:০৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
চাল দিচ্ছেন না মিলাররা

চাল দিচ্ছেন না মিলাররা

ফাইল ছবি
নিউজ ডেস্কঃ
আমনের ভরা মৌসুমেও সরকারি গুদামে চাল দিচ্ছেন না মিলাররা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় তারা চাল দিচ্ছেন না। চুক্তির সময় বাড়িয়েও মিল মালিকদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পায়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি আমন মৌসুমে সরকার ৬ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট নিলেও এখন পর্যন্ত মিলারদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার টনের।

অন্যদিকে চালের মজুদ কমছে হু হু করে। গত বছর এ সময় সরকারি গুদামে চাল ছিল সাড়ে ১০ লাখ টন। একই সময়ে এবার আছে তার অর্ধেক। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ১ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, মিলারদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও আমরা তাদের চাল দেয়ার সুযোগ খোলা রাখব। তারপরও যদি তারা সরকারকে চাল না দেয় তাহলে চাল আমদানি করে প্রয়োজন মেটানো হবে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানির বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। অথচ দাম এখন কমার কথা। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে- বন্যা, অতি বৃষ্টিসহ নানা কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমনের উৎপাদন হয়নি। যে কারণে ধানের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের ওপর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৩৬ শতাংশ আসে আমন থেকে। গত বছর সারা দেশে ৫৬ লাখ ২১ হাজার ৯৪৯ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭২ টন।

চলতি বছর ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষের টার্গেট নেয়া হয় এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ৫৪ লাখ টন। কিন্তু এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ৩৭টি জেলায় সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়, এর মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৩২ হাজার ২১৩ হেক্টর জমির ৩৩৪ কোটি টাকার আউশ ধান, ৭০ হাজার ৮২০ হেক্টর জমির ৩৮০ কোটি টাকার আমন ধান এবং ৭ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বাজারে আমন ধান ও চালের দাম বেশি।

অথচ চলতি আমন মৌসুমে সাড়ে ৮ লাখ টন ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২৬ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২ লাখ টন ধান কেনা হবে। এছাড়া ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

৭ নভেম্বর থেকে ধান ও ১৫ নভেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। চালের জন্য মিল মালিকদের সঙ্গে সরকারের চুক্তির মেয়াদ ১০ ডিসেম্বর শেষ হলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছেন খাদ্য অধিদফতরসংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি। ফলে বেশি দামে কিনে সরকারি গুদামে চাল দিতে হলে প্রতি কেজি চালে ৭ থেকে ৯ টাকা লোকসান গুনতে হবে মিলারদের। এ কারণে মিলাররা চাল দিতে পারছেন না।

তিনি বলেন, আমরাই সরকারকে পরামর্শ দিয়েছি, যেহেতু কম দামে চাল আমদানি করা যাচ্ছে, তাই সরকার যেন আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করে।

সূত্র জানিয়েছে, গত বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। মিল মালিকরা অনেকে খাদ্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তি করেও চালের বাড়তি দরের কারণে গুদামে চাল দেয়নি। সে সঙ্গে করোনা মহামারী ও চার দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে খাদ্যশস্য বিতরণের কারণে সরকারের মজুত দ্রুত কমছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী সরকারি গুদামে ৭ দশমিক ৭১ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৫১ হাজার টন ও গম ২ লাখ ২০ হাজার টন। অথচ মাত্র ১ মাস আগে ৫ নভেম্বর খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১০ লাখ ৩ হাজার ২০ টন। অর্থাৎ ১ মাস ৯ দিনের ব্যবধানে ২ লাখ ১৫ হাজার ২০ টন খাদ্যশস্য মজুদ থেকে কমেছে।

গত বছর এ সময়ে সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪২ টন। এর মধ্যে চাল ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩ টন এবং গম ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৯ টন। এ হিসাবে গত ১ বছরে সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ কমেছে প্রায় ৮ লাখ ১০ হাজার টন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম বোরো। কিন্তু গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ২০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের টার্গেট, তার অর্ধেকও পূরণ হয়নি। এবার আমনের আবাদ ভালো না হওয়ায় আমন সংগ্রহ অভিযানও সফল না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু বিবেচনা করেই চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি মাসেই ভারত থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারের ক্রয় কমিটি। সরকারের মজুদ বাড়াতে প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এমনকি আমনের সংগ্রহ সফল না হলে ওই পরিমাণ চাল আমদানির মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে।

দিনাজপুরে বোরো সংগ্রহ অভিযানের মতো চলতি আমন সংগ্রহ অভিযানও ব্যর্থ হতে চলেছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরে চলতি আমন সংগ্রহ অভিযানে ২৬ টাকা কেজি দরে ১১ হাজার ৯৬৭ টন ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬৭ হাজার ১৯১ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ৬ হাজার ৯শ’ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

সরকারি এ খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে ৭ নভেম্বর থেকে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় এবং ১৫ নভেম্বর থেকে মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল ক্রয় শুরুর কথা। এজন্য খাদ্য বিভাগের সঙ্গে মিল মালিকদের চুক্তির সময়সীমা ছিল ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও খাদ্য বিভাগের সঙ্গে মিল মালিকরা চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় সময় বাড়িয়ে চুক্তি সম্পাদনের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১০ ডিসেম্বর। কিন্তু এতে অধিকাংশ মিল মালিকই খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি।

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশ্রাফুজ্জামান জানান, জেলার প্রায় ২ হাজার মিল মালিকের মধ্যে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি সম্পন্ন করেছেন মাত্র ২৮০ জন। তারা ১১ হাজার ২শ’ টন চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। অথচ দিনাজপুরে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭৪ হাজার ৯১ টন।

সরকারি খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে অংশ নিতে মিল মালিকদের অনাগ্রহের ব্যাপারে দিনাজপুরের চালকল মালিক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন জানান, সরকার এবার ধানের মূল্যের তুলনায় চালের মূল্য নির্ধারণে অসামঞ্জস্য রেখেছে। ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ২৬ টাকা। সেই হিসাবে চালের মূল্য নির্ধারণ করা উচিত ছিল ৪২ টাকা। সেখানে ৩৬ বা ৩৭ টাকায় কিভাবে চাল সরবরাহ করা সম্ভব।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD