নিউজ ডেস্ক।।
নীলফামারী: ১২ জন যাত্রী নিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের ডোমার উপজেলার চিলাহাটি ষ্টেশন থেকে ২০ মিনিট বিলম্বে ২ টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৪ জন ও ভারতের ৮ জন নাগরিক রয়েছেন। ১ জুন আনুষ্ঠানিক ভাবে নিউজলপাইগুড়ি-চিলাহাটি রুটে সপ্তাহে ৪দিন চলাচল করবে ট্রেনটি। বাংলাদেশ সময় ২টা ৫মিনিটে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। ট্রেনটি এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকেই ডোমার ও চিলাহাটি ষ্টেশন এবং লাইনের দুপাশে অসংখ্য মানুষ জমায়েত হন। প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে মানুষজন নতুন এই ট্রেনটি দেখার জন্য উৎসুখ হয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও ভারতের রেলমন্ত্রী অশি^নী বৈঞ্চব বুধবার সকালে ট্রেনের উদ্বোধন করেন। নয়াদিল্লী থেকে বুধবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে মিতালি ট্রেনটির ভার্চুয়াল ফ্লাগ অফ করেন দুই দেশের রেলমন্ত্রী। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে হলদীবাড়ী ও বাংলাদেশের চিলাহাটি রুট দিয়ে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত চলাচল করবে। তবে ভারত –বাংলাদেশ সীমান্তে ট্রেনটি ১০ মিনিটের দুটি বিরতি দিবে। ভারতে হলদিবাড়ী আর বাংলাদেশ সীমান্তের প্রথম ষ্টেশন চিলাহাটি। এই বিরতির মাঝেই সীমান্তে ট্রেনের চালক বদল হবে। ভারতের অংশে ভারতীয় চালক আর বাংলাদেশী অংশে বাংলাদেশী চালকেই ট্রেনটি চালাবে বলে জানিয়েছেন গুডস সহকারী মোঃ ইসমাইল হোসেন।
চিলাহাটি থেকে ঢাকার দুরত্ব ৫৩৬ কিলোমিটার আর চিলাহাটি থেকে নিউজলপাইগুড়ির দুরত্ব ৭০ কিলোমিটার। তবে চিলাহাটি ষ্টেশনে ট্রেনটি থামলেও এই ষ্টেশন থেকে কোন যাত্রী উঠানামা করতে পারবে না। এই এলাকার মানুষকে এই ট্রেন দিয়ে ভারতে যেতে চাইলে তাকে ঢাকায় থেকে উঠতে হবে। পশ্চিমা রেলওয়ের মহা ব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে চিলাহাটি ষ্টেশনে স্বাগত জানান। ট্রেনটি চিলাহাটি ষ্টেশনে ঢোকার সময় উৎসুক জনতা করতালির মাধ্যমে ট্রেনটিকে অভিবাদন জানান। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বিবেকানন্দ চৌধুরী ট্রেনটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে আসেন। এ সময় মেল টি ম্যানেজার কৌশিক ঘোষ ও সহকারী চালক রাকসান কুমার মিশ্রা তার সাথে ছিলেন। বাংলাদেশের চিলাহাটি থেকে গার্ড পিএম সহিদুল ইসলাম ও ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে ট্রেনটি ২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।এর আগে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর এই রুটদিয়ে পন্যবাহী ট্রেনের উদ্বোধন করা হয়।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিলাহাটি আর ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। এরপর ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু উদ্বোধনের পর করোনা পরিস্থিতি ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল। এর আগেও একবার ট্রেন চলাচল শুরু করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক অসিম কুমার জানিয়েছেন বাংলাদেশ- ভারতের ভিসাসহ অন্যান্য জটিলতার অবসান হওয়ায় বুধবার মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১২ জন যাত্রী নিয়ে ভারত সীমান্তের নিউ জলপাইগুড়ির ষ্টেশন থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের ডোমারের চিলাহাটি ষ্টেশন হয়ে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট পৌছাবে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে। মিতালি ট্রেনটি বাংলাদেশের কোন ষ্টেশনে যাত্রী উঠানামা করতে পারবে না। শুধুমাত্র ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকে যাত্রী উঠানো যাবে। যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন চিলাহাটিতে থামলেও যাত্রী উঠা-নামা করা যাবেনা।
মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতের নিউজলপাইগুড়ি ষ্টেশন থেকে বুধবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে হলদীবাড়ী ষ্টেশনে আসবে ১২টা ৫৫ মিনিট। সেখান থেকে বাংলাদেশের চিলাহাটী ষ্টেশনে দুপুর ১টা ৫৫মিনিটে প্রবেশ করে ২০ মিনিট বিরতির পর ট্রেনটি চিলাহাটী হতে ঢাকা ক্যান্টমেন্ট ষ্টেশনে রাত ১০টা ৩০ মিনিট পৌছাবে।
চিলাহাটী ষ্টেশন মাস্টার রুহুল আমিন জানান প্রথমদিনের আনূষ্ঠানিকতার কারনে ২০ মিনিট বিলম্বে ২টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি চিলাহাটি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বৃহষ্পতিবার ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাত ৯টা ৫০মিনিট ছেড়ে চিলাহাটী ষ্টেশনে এস পৌছাবে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট এবং নিউজলপাইগুড়ি পৌছাবে ৭টা ১৫মিনিটে।
ট্রেনটি ঢাকার ক্যান্টমেন্ট ষ্টেশন হতে ভারতের নিউজলপাইগুড়ি পথে সপ্তাহে দুইদিন চলাচল করবে। ঢাকা ক্যান্টমেন্ট থেকে ভারতে যাবে সোম ও বৃহষ্পতিবার এবং ভারতের নিউজলপাইগুড়ি থেকে বাংলাদেশে আসবে রোববার ও বুধবার । বাংলাদেশ অংশে ঢাকা ও চট্রগ্রামে এই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস জটিলতার কারনে আপাতত চিলাহাটিতে টিকিট বিক্রি ও যাত্রী উঠানামা বন্ধ রয়েছে।
ট্রেন দেখতে আসা চাল ব্যবসায়ী নুরন্নবী জানান, সকাল থেকে প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে ট্রেনটি এক নজর দেখার জন্য চিলাহাটি ষ্টেশনে এসে অপেক্ষায় ছিলাম। দুপুরে ট্রেনটি ষ্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর আমরাও বাড়ী চলে আসি। ট্রেনটে দেখতে পেয়ে আবেগে ভাসছেন মুক্তিরহাটের বুলু ইসলাম। তিনি জানান ইমিগ্রেশন জটিলতায় এখন চিলাহাটি থেকে যাত্রী উঠানামা করা না গেলেও এক সময় ঠিকই এখান থেকে ভারত যাওয়া যাবে। আশরাতুন নাহার নামে এক নারী ট্রেনটি দেখতে এসেছেন পরিবারের সকলকে নিয়ে। তিনি জানান ট্রেন চালু হওয়ায় আমরা খুশি। আপাতত আমাদের সাময়িক অসুবিধা হলেও এক সময় এর সুফলপাবে ডোমার-নীলফামারীর মানুষজন। শিক্ষক হরিদাস রায় জানান, চিলাহাটি থেকে জলপাইগুড়ির দুরত্ব ৭০ কিঃমিটার অথচ এই ৭০ কিলোমিটার যেতে আমাকে ১ হাজার কিলোমিটার ঘুরতে হবে। তাই এই অঞ্চলের মানুষ মিতালি ট্রেনে চড়ে হয়তো ভারত যাওয়া সম্ভব হবেনা। কারন এই ট্রেনে করে আপনাকে ভারত যেতে হলে আগে ৫০০ কিলোমিটার ঘুরে ঢাকা যেতে হবে। সেখান থেকে প্রায় ৬শত কিলোমিটার ঘুরে ভারতে আসতে হবে। ফলে মানুষেরমধ্যে ক্লান্তিভাব চলে আসবে।
রওশন রশীদ নামে এক ব্যক্তি জানান,এই অঞ্চলের মানুষের সুবিধার কথা ভেবে অচিরেই চিলাহাটিতে ইমিগ্রেশন চালু করে এই ষ্টেশন থেকে যাত্রী উঠানামার ব্যবস্থা করা। আর এটা করা না গেলে এত সুন্দর একটা উদ্যোগ মুখ থুবরে পরতে পারে। শরিফুল ইসলাম জানান, এখানকার অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য সড়কপথে ভারতে যাতায়াত করে থাকে। চিলাহাটি থেকে ভারতে দুরত্বও অনেক কম। তাই চিলাহাটি থেকে যাত্রী উঠানোর ব্যবস্থা থাকলে এই অঞ্চলের মানুষের যেমন খরচ কমবে তেমনি যাত্রা করাও সম্ভব হবে।
Leave a Reply