ছবি: সংগৃহীত
নিউজ ডেস্কঃ
দেশে শুরু হয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি-৮১ ধান চাষ। নতুন জাতের এ ধান প্রচলিত ব্রি-২৮ জাতের চেয়ে দেড়গুণ বেশি ফলন দেবে। এতে বগুড়ার ধানের বাজার থেকে বাড়তি আয় হবে ৫৫ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকা।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রি-২৮ জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয় ১৯৯৪ সালে। পুরাতন হওয়ায় প্রতি বছর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ফলন কমে আসছে এ জাতের। এ সমস্যার সমাধানে কৃষি গবেষকরা ব্রি-৮১ জাতের ধান উদ্ভাবন করেন। এ জাতের রোগ প্রতিরোধ ও উৎপাদন ক্ষমতা বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এরই মধ্যে ব্রি-৮১ ধান চাষে কৃষকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মাঠ প্রদর্শনীতে উৎপাদিত ধান কৃষকদের কাছে বীজ হিসেবে সংরক্ষণের জন্য দেয়া হয়েছে। তারা চাইলে আগামী মৌসুমে এসব বীজ বিক্রি করতে পারবেন। আগামীতে বোরো মৌসুমে পুরনো জাতের পরিবর্তে নতুন ব্রি-৮১ ধান বেশি চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ব্রি-৮১ ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়। এটি মূলত ইরানের আমল-৩ জাতের ধানের সঙ্গে দেশীয় ব্রি-২৮ জাতের সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত। এ ধানের গাছ উচ্চতায় ব্রি-২৮ জাতের প্রায় সমান। তবে পাতাগুলো একটু মোটা। ব্রি-৮১ জাতের কাণ্ড মোটা ও শক্ত, ফলে সহজে হেলে পড়ে না। ধানের আকৃতি লম্বা, চিকন ও একটু বাঁকা। এক হাজার পুষ্ট ব্রি-৮১ ধানের ওজন ২০ দশমিক ৩ গ্রাম। এর জীবনকাল ২৮ জাতের ধানের চেয়ে ৪-৫ দিন বেশি। তবে ব্রি-৮১ এর ফলনও বেশি পাওয়া যায়। প্রতি হেক্টরে এ ধানের ফলন প্রায় সাড়ে ছয় মেট্রিক টন। গবেষকদের দাবি, উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতি হেক্টরে আট মেট্রিক টন ফলন পাওয়া সম্ভব।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ২৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ ধানের আবাদ হয়েছে। এতে গড় ফলন আসে প্রায় এক লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন। একই জমিতে ব্রি-৮১ ধানের আবাদে ফলন আসবে আরো প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার মেট্রিক টন। এ হিসেবে মোট ধান হবে সাত লাখ ৪৩ হাজার ৮৫০ মণ।
ব্রি-২৮ জাতের ধান গড়ে ৯০০ টাকা মণ বিক্রি করলে আয় হয় ৩৬৬ কোটি ৮৬ লাখ সাড়ে ৬৮ হাজার ২০০ টাকা। একই পরিমাণ জমিতে উৎপাদিত ব্রি-৮১ জাতের ধান বিক্রি হবে ৪২২ কোটি ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ১৫০ টাকায়। এ হিসেবে নতুন জাতের ধান চাষে বগুড়ায় ৫৫ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকা বাড়তি আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, বগুড়ায় গত বছর থেকে ব্রি-৮১ ধানের প্রদর্শনী করা হচ্ছে। চলতি বছর বোরো মৌসুমে ৫০টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। প্রতি প্লটে পাঁচ একর করে ২৫০ একর জমিতে চাষ হয়েছে ব্রি-৮১ জাতের ধান। কৃষকরা বীজ হিসেবে বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে এসব প্লটে ধান উৎপাদন করেছেন।
তিনি আরো জানান, বীজের মান ভালো রাখতে কৃষকদের বীজ, সার দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রতি প্লটে ৫০ কেজি বীজ ও পরিমাণ মতো সার দেয়া হয় প্রদর্শনীর জমির মালিকদের। প্রদর্শনী প্লটসহ জেলায় এবার দুই হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমিতে ব্রি-৮১ জাতের ধান চাষ হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, ব্রি-৮১ নিঃসন্দেহে ভালো জাতের ধান। এটি আপাতত ব্যাপক আকারে বাজারজাতের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে কৃষকদের প্রদর্শনী প্লট দেয়া হয়েছে। তারা আবাদ করে সন্তুষ্ট ও ভালো ফলন পেলে এমনিতেই অন্যরা উৎসাহী হবেন।
Leave a Reply