শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটা একদিন বের হবে : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটা একদিন বের হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক।।
ছবিঃ সংগ্রহিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানকে পুনরায় অভিযুক্ত করে বলেছেন, ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটা একদিন বের হবে।

তিনি বলেন, ‘হত্যার বিচার হয়েছে। তবে, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল, একদিন সেটাও আবিষ্কার হবে। কিন্তু, আমাদের কাজ একটা ছিল- প্রত্যক্ষভাবে যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করা। আর সব থেকে বড় কাজ এই দেশ এবং দেশের মানুষ নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন- দেশের মানুষের উন্নয়ন করা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন করাটাকেই আমি সব থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তাই, পেছনে কে ষড়যন্ত্র করেছে, কি করেছে সেদিকে না গিয়ে আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এই ক্ষুধার্ত দরিদ্র মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করে তাঁদের জীবন মান উন্নত করা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার (১লা আগষ্ট) সকালে শোকের মাসের প্রথম দিনে আসন্ন শোক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ধানমন্ডী ৩২ নম্বরের জাতির পিতা ম্মৃতি জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভেনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিল।

জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ’ উদ্ধৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রক্ত জাতির পিতাও দিয়ে গেছেন। কারণ, যখন এদেশের মানুষকে তিনি মুক্ত করেছেন তখন যারা স্বাধীনতা বিরোধী বা যারা বিজয় চায়নি তারা তাঁকে হত্যা করেছে।’

এই সময় প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্রকারি হিসেবে আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক-রশিদের স্বেচ্ছায় বিবিসিকে দেয়া ইন্টারভিউ অনুযায়ী সাবেক সেনা শাসক জিয়াউর রহমানকে নেপথ্য শক্তি হিসেবে উল্লেখের তথ্য এবং পরবর্তীতে ধারাবাহিক ভাবে খুনীদের পুরস্কৃত করায় জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর (জাতির পিতার) রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।’
তিনি রক্তদান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে বলেন, এই রক্তদানের মাধ্যমে আমরা একজন মুমূর্ষু রোগীকেও যদি বাঁচাতে পারি, সেটাই হবে সব থেকে বড় কথা। কেননা, মানবকল্যাণে আপনি দান করছেন।

তিনি বলেন, বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি কিন্তু একটা আদর্শকে নিয়েই পথ চলি, যে কথাগুলো ছোটবেলা থেকে বাবার মুখে শুনেছি, সেই স্বপ্নটাকে আমার বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ^ দরবারে বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারে।

অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়–ুয়া, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানের আয়োজক কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, এমপি বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বেগম মতিয়া চৌধুরী দুঃস্থ কৃষকদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনার ভয়াল থাবা সত্ত্বেও মানুষের খাদ্যের এবং তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা সরকার করে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে । তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেন কোন দিন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্যই জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ধাপে ধাপে সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধেও চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন। কিন্তু, পাকিস্তানি শাসক চক্র, এদেশেরও কিছু দালাল চক্র এবং তাদের তোষামোদকারী, পদলেহনকারী কিছু গোষ্ঠী বাঙালির এই অভ্যুদ্যয় বা এই বিজয়কে কখনো মেনে নিতে পারেনি। ‘তবে, আমার এটাই অবাক লাগে যে, এর সঙ্গে (জাতির পিতা হত্যাকান্ড) আমাদের যারা, তাঁরা কিভাবে জড়িত থাকলো,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নিজের দলের ভেতরে খন্দকার মুশতাক যেমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, আবার অনেকেই তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। আর এই ঘটনা ঘটাতে যেহেতু সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্য তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু, উচ্চ পর্যায়ে যদি তাদের পক্ষে কেউ না থাকতো, তবে, এটা কখনো সম্ভব ছিল না।

সরকার প্রধান বলেন, উচ্চ পর্যায়ে তাদের সঙ্গে কে ছিল সেটা তো ১৫ অগাস্টের হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত কর্নেল ফারুক ও রশীদ বিবিসিকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল সেই সাক্ষাৎকারেই বলেছিল, উপ-সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাদেও যোগাযোগ ছিল, সম্পর্ক ছিল এবং সফল হতে পারলে সে তাদের পাশে থাকবে এই কথাও দিয়েছিল এবং সব রকম সহযোগিতাও করেছিল।

কাজেই, মুশতাক-জিয়ার যেই সখ্যতা এবং তাদের যে এই কাজের সাথে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততা স্পষ্ট উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার সাথে সাথে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধেও যেই আদর্শ সেই আদর্শ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যূত হয়ে যায়। যদিও, বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না- এটা ৭ মার্চের ভাষণেই জাতির পিতা বলে গেছেন।

তিনি বলেন, সেই ৭ মার্চের ভাষণ যেটা এক সময় নিষিদ্ধ ছিল সেই ভাষণও আজ বিশে^র সবচেয়ে উদ্ব্দ্ধুকারি একটি ভাষণ হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়েছে।

জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, কাজেই দেশের নাগরিক হিসেবে পিতৃহত্যার বিচার চাওয়ার তাঁদের কোন পথ ছিল না। উপরন্তু খুনীদের পুরস্কার হিসেবে জিয়াউর রহমান তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেন।

খুনীদের পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি, ব্যবসার সুযোগ ও বিপুল অর্থের মালিক করে দেয়, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়ার পথ ধরে আমরা দেখেছি জেনারেল এরশাদ এই খুনীদের রাজনীতি করার, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেয় এমনকি ভোট চুরি করে পার্লামেন্টেরও মেম্বার করে।

তা থেকে একধাপ উপরে গিয়ে খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে খুনী রশিদকে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে বসায় এবং আরেক খুনীকে পার্লামেন্টে মেম্বার করে তাদেরকে পুরস্কৃত করে।

’৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকারে এসে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিলের মাধ্যমে তাঁর সরকার এই হত্যাকান্ডের বিচারের সমস্ত বাধা দূর করে বিচার কাজ শুরু করে এবং ২০০৯ সালে পুণরায় ক্ষমতায় আসার পর সেই বিচার সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জাতির পিতা হত্যাকান্ডের বিচারের রায় ঘোষণার দিনেও হরতাল ডেকে সেসময় বিরোধী দলে থাকা খালেদা জিয়া বিচারে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। যদিও সেই বিচারের রায় হয়েছিল এবং তাঁর সরকার দু’জন খুনীকে আমেরিকা ও থাইল্যান্ড থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু পুণরায় খালেদা জিয়া ২০০১ সালে সরকারে এসে সেই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়ে আবারও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে।

এমনকি, ৩ নভেম্বর যখন বিচারের রায় ঘোষণার তারিখ সুনির্দিষ্ট করা হয়, তারপরেও, এক খুনীকে খালেদা জিয়া চাকরি ফিরিয়ে দেয় এবং প্রমোশন দেয় এবং পরবর্তীতে তাকে দূতাবাসেও চাকরি দেয়। কারণ, প্রমোশন দিয়ে তিনি মনে হয়, এটাই দেখাতে চেয়েছেন যে এই খুনীদের বিচার করা যাবে না।

একজন খুনী মৃত্যুবরণ করেছিল সেই মৃত ব্যক্তিকেও খালেদা জিয়া প্রমোশন দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার তাকে ডিসমিস করেছিল তাই অবসর ভাতা দিয়েও তাকে পুরস্কৃত করে।

বাংলাদেশের মানুষের ওপর জাতির পিতার অগাধ বিশ^াসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন পাকিস্তানীরা যখন চেষ্টা করে তাঁকে হত্যা করতে পারেনি। বাঙালিরা কেন মারবে। যে কারণে, অনেকেই অনেক ভাবে তাঁকে খবর দিয়েছেন বা বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তিনি কখনো বিশ্বাস করেননি।

তিনি এ প্রসঙ্গ জাতির পিতার বলা একটি কথা’র উদ্ধৃতি দেন- জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘এরা আমরা সন্তানের মত। আমাকে কেন মারবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার সেই বিশ্বাসে চরম আঘাত দিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD