সিয়াম মাহমুদ
সরকারি তিতুমীর কলেজ
পশ্চিমে হেলে পড়েছে সূর্য। মাঠে বড় দু’টি অট্টালিকার ছায়া নেয়েছে। সন্ধ্যার আগ মুহুর্ত। এই সময়ে কয়েকদল শিক্ষার্থী গোল করে সবুজ ঘাসের উপর বসে আছে। পবিত্র রমজান মাস। কিছুক্ষণ পরেই মাগরিবের আজান হবে। তাই সামনে ঈফতার সাজিয়ে আজানের অপেক্ষা করছেন শিক্ষার্থীরা। এই চিত্রটি রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি তিতুমীর কলেজের। প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা নিজ ক্যাম্পাসের মাঠে ইফতার করেন। এই দৃশ্যটি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবার মন কাড়ে।
পবিত্র রমজান মাসে ইফতার এবং সেহরি পালন, রোজার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরা একসাথে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাসে ইফতার করেন। প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে ইফতার করতে দূর থেকেও ক্যাম্পাসে আসেন অনেকে। নিজেদের অর্থায়নেই তাদের এই আয়োজন।
ইফতার উপলক্ষে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। ক্যাম্পাসের মাঠে ইফতারের প্রস্তুতির জন্য নানা তোড়জোড় শুরু হয়। প্রত্যেকে নিজেদের পছন্দ মতো বন্ধু-সহপাঠীদের নিয়ে পছন্দের জায়গায় ইফতার আয়োজনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এছাড়া কলেজের মাঠ, শাকিল চত্বর, বেলায়েত চত্বর, ছাত্রলীগ চত্বর, শেখ রাসেল পুষ্পকাননের পাশে ও বিভিন্ন রুম এবং শহীদ বরকত অডিটেরিয়াম সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, কলেজের বিভিন্ন বিভাগসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, জেলা ও আঞ্চলিক ছাত্র সংগঠনগুলো ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের বন্ধুরা মিলেও ইফতারের আয়োজন করে। কখনও কখনও তাদের এই আয়োজনে অংশ নেন কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকরাও।
শিক্ষার্থীদের এই ইফতার আয়োজনে থাকে খেঁজুর, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, জিলাপি, তরমুজ, আনারস, শরবতসহ অন্যান্য ইফতার সামগ্রী।
কলেজ মাঠের এই ইফতার প্রসঙ্গে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান (২০১৯-২০২০) বিভাগের শিক্ষার্থী মো: ফয়সাল হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে ইফতার আয়োজন খুবই সুন্দর ছিল। ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন জেলার সহপাঠীদের সাথে ইফতার করা অন্য রকম আনন্দের। একসাথে ইফতারের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুদের সম্পর্ক মজবুত হয়েছে।
আরেক শিক্ষার্থী সোহান হাসান বলেন, ডিপার্টমেন্টের সহপাঠীরা একসাথে মাঠে বসে ইফতার করেছি। আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড ম্যাম ও সহযোগী অধ্যাপক কামাল হায়দার স্যারও আমাদের ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছেন। সবাই মিলে ভাতৃত্ব বন্ধনে আমরা ইফতার করেছি।
রবিউল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ঢাকায় মেসে থাকি। কলেজ খোলা থাকায় পরিবার নিয়ে এক সাথে ইফতার করতে পারি না। তবে বন্ধুদের সাথে কলেজের মাঠে ইফতার করে খুবই ভালো লাগে। মনে হয়, আমরা পরিবারের সাথেই ইফতার করছি।
ইফতার শেষ করে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে ক্যাম্পাস মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য চলে যান। এরপর রাতে চাঁদের আলোয় ক্যাম্পাসের শীতল হাওয়া উপভোগ করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের গন্তব্যে চলে যান।
Leave a Reply