ডেস্ক রিপোর্ট।।
ছবিঃ সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের কারণে দেড় বছর দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর আজ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হচ্ছে। দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর আবারও প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর হবে স্কুল-কলেজ। বন্ধের এই সময়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষায় ছিল ছাত্র-ছাত্রীরা। আজ তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা আয়োজনের কথা থাকলেও এখনো তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আজ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিক্ষক-অভিভাবকসহ সচেতন মহল বলছেন, স্কুল-কলেজ খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। যদিও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর-মাউশি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর সার্বিক প্রস্তুতি দেখতে আজ সকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজ পরিদর্শনে যাবেন।
তথ্যমতে, স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধুলোমাখা বেঞ্চ, ব্লাক বোর্ড ছাড়াও পরিষ্কার করা হয়েছে ক্লাস রুম। হাতধোয়ার বেসিন স্থাপন, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক দূরত্বের বিধি, হাতধোয়ার সঠিক নিয়ম, মাস্ক পরার নিয়ম, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারও টাঙানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক নির্দেশনা অনুসরণ করে ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর নির্দেশনা’ জারি করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজগুলোকে মানতে হচ্ছে এসব নির্দেশনাও।
আজ থেকে শ্রেণিকক্ষে সশরীরের পাঠদানে অংশগ্রহণ করবে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে শিক্ষকরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা আসার পর থেকেই শিক্ষকরা ব্যস্ত ছিলেন পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিয়ে। একদিকে তারা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক রুটিন তৈরির পাশাপাশি ক্লাসরুমে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে বসানো, হাত ধোয়া, অসুস্থ হলে বিশেষ কক্ষে পরিচর্যা ইত্যাদি প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ। শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে প্রত্যন্ত এলাকার অনেক স্কুল-কলেজে শুক্রবারও ধোয়ামোছার কাজ করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো স্কুলের সামনে এখনও আগাছা ও জলাবদ্ধতা দেখা যায়। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হবে না। শুধু পিইসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা দৈনিক ক্লাস করবে। বাকিদের একদিন সরাসরি পাঠদান হবে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো অনলাইনে বা টেলিভিশনে দূরশিক্ষণে পাঠদান চলবে।শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুাযায়ী ১০টি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এই নির্দেশনা মেনে ইতিমধ্যে রুটিন দিয়েছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে সংশয়ে আছেন কিছু অভিভাবক। মাউশির এই নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন ক্লাস হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুটিন প্রণয়ন করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে সেগুলোতে সব স্তরের জন্য নির্ধারিত ক্লাসগুলো সমন্বয় করে রুটিন প্রণয়ন করতে হবে। মাউশির এই নির্দেশনা মেনে স্কুল-কলেজগুলোতে আজ থেকে শুরু হবে ক্লাস। রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করবে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বের হবে। করোনা চলাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলিও বন্ধ থাকবে। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও চলবে স্বাভাবিক কার্যক্রম। তবে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল খুলে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে মাউশি অধিদফতর। হোস্টেল চালুর ক্ষেত্রে কভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে হোস্টেল খুলে দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মানতে হবে ১৪ নির্দেশনা। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- সব সমাবেশ স্থান-ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি, স্পোর্টস রুম ও অন্যান্য রুম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। রান্নাঘর থেকে রুমগুলোতে সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। একাধিক শিক্ষার্থীর একই বিছানা ব্যবহার করা যাবে না। একসঙ্গে নামাজ, প্রার্থনা, সমাবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে ওঠার আগে কভিড আরটিপিসিআর পরীক্ষা করে ফলাফল নেগেটিত হলে হোস্টেলে আসবে। হোস্টেলে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। হোস্টেল, বাথরুম, টয়লেট, বেসিন, ড্রেন ইত্যাদি প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করে রাখতে হবে। সবাই ব্যক্তিগত সাবান, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার করবে এবং ব্যক্তিগত লকার অন্যান্য জিনিসপত্র পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখবে। হোস্টেলে খাবার পানি ও খাদ্যসামগ্রী নিরাপদ রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু সংক্রমণ ও এডিস মশা বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইড লাইন অনুসরণ করতে হবে। আবাসিক শিক্ষার্থী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারী ব্যতীত অন্য কেউ হোস্টেলে অবস্থান বা যাতায়াত করতে পারবেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার পর কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে তা প্রতিদিন জানাতে ও সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। অধিদফতরের অধীন সব শিক্ষা কর্মকর্তাকে তার থানা/উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিদিন মনিটরিং করে বিকালে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং-এর মেইলে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘ সময় পরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসায় নির্দিষ্ট পোশাক নিয়ে স্কুলগুলোতে আজ তেমন কড়াকড়ি থাকবে না বলে জানা গেছে। রাজধানীর নেভি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, স্যার জন উইলসন স্কুল, সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান সাধারণ শোভন পোশাকে শিক্ষার্থীরা রোববার স্কুলে আসতে পারবে বলে নোটিশে জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মাঝে বেশ কয়েকবার খোলার কথা উঠলেও পরিস্থিতির কারণে বারবার পিছিয়ে দেওয়া হয় তারিখ।
Leave a Reply