নিউজ ডেস্ক।।
ছবিঃ সংগৃহীত
রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১৮ ) বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
একইসঙ্গে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরীক্ষা পরিচালনার সুযোগ না দিতে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের (বিএসসিএস) আওতায় গত ৬ নভেম্বর ৫টি ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ছিল আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এ প্রেক্ষিতে বিএসসিএস কর্তৃক ওই পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বিএসসিএসর আরও দুটি পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় তা ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরীক্ষা পরিচালনার সুযোগ না দিতে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ওই পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে ওই প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উল্লেখিত পরীক্ষায় কেউ জড়িত না থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য ‘সিসিটিভি অপারেটর’ পদে গত বছরের ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ আসে। এর প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে ব্যাংকের যুগ্মপরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ এবং মো. আলমাছ আলীকে গত ১৩ জুন সাময়িক বরখান্ত করা হয়। এছাড়া অভিযোগের সার্বিক বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হবার পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কোনো নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়। এজাতীয় সেবা ক্রয়ের/গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রচলিত সকল বিধি-বিধান স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিপালন নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্যদের নির্বাহী কমিটির অনুমোদক্রমে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তাছাড়া হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম পরিচালনা করে। অপরদিকে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস) শুধুমাত্র সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের লোকবল নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই দুটি আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট দুজন ভিন্ন ভিন্ন ডেপুটি গভর্নরের উপর ন্যস্ত রয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে তারা আলাদাভাবে কাজ করেন। তাই এ পর্যায়ের ঊধ্র্বতন কর্তৃপক্ষের একে অপরের কাজে প্রভাবিত করার কোনো এখতিয়ার বা সুযোগ নেই বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
গত ১০ নভেম্বর বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, পাঁচটি ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে এক হাজার ৫১১ জন জনকে নিয়োগ দিতে ৬ নভেম্বর বিকালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি ও এই পরীক্ষা সম্পাদনের দায়িত্বে ছিল আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি সরকারি ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদে সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার আগের রাত থেকে এবং পরীক্ষার পর প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এরপর মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা হলেন, মূলহোতা আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনিশিয়ান মোক্তারুজ্জামান রয়েল (২৬), জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার অফিসার শামসুল হক শ্যামল (৩৪), রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন (৩০), পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলন (৩৮) ও চাকরিপ্রার্থী স্বপন। পরে বুধবার রাতে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। তারা হলেন- জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা ও ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবি জাহিদ।
Leave a Reply