সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
অবশেষে ফের স্বপ্নের কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক ও চক্ষু হাসপাতাল চালু

অবশেষে ফের স্বপ্নের কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক ও চক্ষু হাসপাতাল চালু

খাদেমুল মোরসালিন শাকীর,নীলফামারী প্রতিনিধি\

নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ ও জাপা’র কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান আদেল বলেন-গরীব মানুষের সেবায় মডেল হবে কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক ও চক্ষু হাসপাতাল। চক্ষু, দন্ত, গর্ভবর্তী মা’সহ ডায়াবেটিক রোগীদের নামমাত্র মূল্যে সেবা দেয়ার প্রত্যয়ে এ হাসপাাতলটি চালু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আগামীতে এ হাসপাাতলটি একটি বড় প্রতিষ্ঠানে রূপ নিবে সে প্রত্যাশা নিয়ে আমরা সকলে একসাথে কাজ করবো। আমার নির্বাচনী এলাকায় এত সুন্দর একটি হাসপাতাল রয়েছে আমি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। যা আবার নামমাত্র মূল্যে সেবাই যার প্রত্যয়। এছাড়া তিনি এ হাসপাতালে ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়ারও প্রতিশ্রæতি দেন। তিনি শুক্রবার নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় “কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক এন্ড চক্ষু হাসপাতাল’র পূনঃ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে-একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? ভূপন হাজারিকার জনপ্রিয় এ গানের সহানুভূতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিশোরগঞ্জের মানুষ সহানুভূতির হাত প্রসারিত করে। বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে গড়ে তুলে কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল। ডায়াবেটিকস, গর্ভবতী রোগীসহ সাধারণ রোগীদের সেবা দেয়ার ব্রতে আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে মেশিন, ইসিজি, চক্ষু ইউনিট, দাঁতের ইউনিট, নিজস্ব ল্যাব নিয়ে নামমাত্র মূল্যে সেবা দিতে চালু হয়েছিল এ হাসপাতালটি। ভাল চলছিল এ হাসপাতালটিও। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ এটির পথচলা বন্ধ হয়। শুধু ভবন হয়ে পড়ে থাকে এ সহানুভূতির হাসপাতালটি। সেটি নতুন ভাবে ফের পথচলা শুরু করে শুক্রবার ২৬ আগষ্ট। নামমাত্র মূল্যে এ উপজেলার সাধারণ মানুষরা সেবা পাবে এ হাসপাতালের সেটাই মূল লক্ষ্য বলে জানান উপজেলা প্রশাসন।
২০১২ সালে কিছু উদ্যোগী মানুষ কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির কার্যক্রম শুরু করলে এর সাথে যুক্ত হয় উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ওই সালের ০৪ এপ্রিল ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে গঠন করা হয় কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি। তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ গোলাম আজমের নেতৃত্বে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ইফতার শেষে অডিটোরিয়ামে বসতো ডায়াবেটিক সমিতি ও হাসপাতাল নির্মাণের যাত্রীদের মিলন মেলা। প্রতিদিনের ওই মিলন মেলা থেকে শুরু হয় হিতৈষী সদস্যদের টাকা আদায়। স্বেচ্ছায় সামর্থ্য অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করতে শুরু করেন। খোলা হয় কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির একটি নিজস্ব একাউন্ট। জমতে থাকে টাকা। এ টাকা দিয়ে কিছুই হবে না। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ অভিযান। ওই সময় ঈদের দিন নামাজ শেষে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন বাবুল, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ গোলাম আজম , ইউপি চেয়ারম্যানগণসহ ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণ স্বপ্নের যাত্রীরা দু’টি গাড়ী যোগে ছুটতে থাকে গ্রামীন মেঠো পথে। যাদের বাড়িতে গাড়ী থামছে তারাই অবাক হয় ঈদের দিনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ী তাদের বাড়িতে। ওই সব ব্যক্তিদের বাসায় গিয়ে যখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতাল তৈরীর পরিকল্পনাটি বলেন তখন স্বতর্স্ফূতভাবে টাকা প্রদানের প্রতিশ্রæতি দেন অনেকে আবার অনেকে নগদ অর্থ প্রদান করেন। এভাবে সাধারণ মানুষদের সহানুভূতির অর্থ দিয়ে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানে ৪ হাজার বর্গ ফুট জায়গার উপর শুরু হয় কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিজস্ব ডিজাইনে ডায়াবেটিক চিকিৎসাসহ চক্ষু, দন্ত, প্রসূতি, হার্ড, কিডনি রোগের চিকিৎসা সেবার লক্ষে একটি সুদৃশ্য ভবন নির্মিত হয়। এভাবেই পথচলা শুরু কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের। হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনগনের প্রিয় ব্যক্তি হয়ে যান। তাঁর নেতৃত্বে নির্ভৃত এক পল্লী উপজেলায় আধুনিক একটি হাসপাতাল নির্মাণ হয়। এরেই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আকস্মিত বদলী হলে সব স্বপ্ন ভেঁেঙ্গ যেতে থাকে। স্তমিত হয়ে পড়ে গোটা কিশোরগঞ্জ। সবার মুখে প্রশ্ন উঠে হাসপাতালটি কি আদৌ চালু হবে ? বদলীর খবর শুনে মানুষ ছুটতে থাকে তাঁর সাথে দেখা করার জন্য এবং সবাই দাবী করেন স্যার হাসপাতালটি চালু করে দিয়ে যান। তখন তিনি কাঁেদা কাদোঁ কন্ঠে বলেন- আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সৎ। আপনারা ভবিষ্যতে সৎ ভাবে কাজ করবেন ইনশাআল্লাহ হাসপাতাল চালু হবে। এর মধ্যে নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সিদ্দিুকুর রহমান কিশোরগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করলে তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে ছুটে এসে হাসপাতালটি চালুর অনুরোধ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্দিকুর রহমান ২০১৪ সালের মার্চ মাসে কিশোরগঞ্জে যোগদান করে অত্র এলাকার সাধারণ মানুষদের আকাংখা ও স্বপ্নের ডায়াবেটিক হাসপাতালটি চালুর উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেন। এসময় হাসপাতালটির কান্ডারী হয়ে দাড়ায় তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অফিসার ইনচার্জ দু’জনে মিলে অর্থ সংগ্রহ পূর্বক যন্ত্রপাতি ক্রয় শুরু করেন। সহানূভূতির অর্থে গড়া হাসপাতালটি হাসতে শুরু করে। শত প্রতিকুলতা-বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল এটির শুভ উদ্বোধন করা হয়। সেই থেকে পথচলা হাসপাতালটির। সাধারণ মানুষদের নামমাত্র মুল্যে সেবায় জনপ্রিয় হয়ে উঠে এ হাসপাতালটি। চলছিল ভাল কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ধীরে ধীরে এ হাসপাতালটির পথচলা থেমে যায়। পড়ে থাকে দীর্ঘদিন।

বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী যোগদান করার পর সাধারণ মানুষদের নামমাত্র মূল্যের সেবা দেয়া এ হাসপাতালটি ফের চালুর উদ্দ্যোগ নেন। সভা করে নতুন কমিটি করেন। পড়ে থাকায় যন্ত্রপাতিগুলোতে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। ইঞ্জিনিয়ার এনে সেগুলো সচল করেন। এ হাসপাতালের জন্য ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় জনবলও নেয়া হয়। কিশোরগঞ্জের মানুষের সহানুভূতির অর্থে গড়া হাসপাতালটি শুক্রবার ২৬ আগষ্ট ফের প্রাণ ফিরে পাওয়ায় সাধারণ মানুষ খুশি। নামমাত্র মূল্যে সেবা পাওয়ার লাইনও হবে দীর্ঘ, সেবা প্রত্যাশী রোগীরা মানসম্মত সেবা পাবে সে প্রত্যাশাও সকলের। কিন্তু কাকতালিয় ব্যাপার, সহানুভূতির অর্থে গড়া এ হাসপাতালটি শুভ উদ্বোধন হয়েছিল ২৬ তারিখে, অন্যদিকে নবরুপে পথচলাও শুরু হলো ওই ২৬ তারিখেই। এ গরীব রোগীদের সেবা দেয়া হাসপাতালটি চালু করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-ই-আলম সিদ্দিকীসহ পিছনের কারিগড়দের স্থানীয় প্রেসক্লাব অভিনন্দন জানান।
পূনঃ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী। বক্তব্য রাখেন অফিসার ইনচার্জ রাজিব কুমার রায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, প্রেস ক্লাব আহŸায়ক আবু হাসান শেখ, বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান ফজলার রহমান, কিশোরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেট বাবু, পুটিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সায়েম, বাহাগিলী ইউপি চেয়ারম্যান সুজাউদ্দৌলা লিপটন, মাগুড়া ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠু, বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, আতিবুর রেজা হেলাল, ফজলার রহমান, রউফুল ইসলাম প্রমুখ।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD