খাদেমুল মোরসালিন শাকীর,নীলফামারী প্রতিনিধি \
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে ৩ ইউনিয়নের ১শ ৪০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে আধা পাকা ঘর।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে,সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৩ জানুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব বাড়ী উদ্বোধনের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তাস্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সরকারী খাস জমিতে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিদিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে কর্মকর্তারা কাজের তদারকি করছেন। কাজে যেন কোন ত্রæটি না হয় সেজন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা বেগম নিজেই প্রতিদিন সকালে ও বিকালে করে নির্মানাধীন ঘরের কাজ পরিদর্শন করছেন। চাঁদখানা ইউনিয়নের ৪০,বাহাগিলী ইউনিয়নের ৪০ ও নিতাই ইউনিয়নের ৬০ গৃহহীন ও ভূমিহীনদের তালিকাও সম্পন্ন করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গঠিত কমিটি।
‘আশ্রয়নের অধিকার- শেখ হাসিনার উপহার’ এ শ্লোগানে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১শ ৪০ পরিবার উপহার হিসাবে পাবে ২শতাংশ জমি,২কক্ষ বিশিষ্ট বারাদ্দাসহ আধা পাকা থাকার ঘর। থাকার ঘরের সাথে সংযুক্ত আছে একটি বার্থরুম গোসল খানা ও রান্না ঘর। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা।
ভূমিহীন ও গৃহহীনদের কাছে বাড়ী হস্তান্তর করার পূর্বে প্রতিটি বাড়ীর মালিকদের জন্য নামজারী ও খারিজের কাজও সম্পন্ন প্রায়। প্রতিটি বাড়ীতে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের জন্য পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী। প্রতিটি বাড়ী দৃষ্টি নন্দন করে তুলতে ভিতরে এবং বাহিরে করা হচ্ছে আকর্ষনীয় রংয়ের কাজ। গাছের সবুজ পাতার সাথে ঘরের টিন সবুজ রংয়ের হওয়ায় প্রকল্প এলাকা জুড়ে এখন বিশাল সবুজের সমাহার। প্রকল্প এলাকার কাজ ইতঃপূর্বে পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী।
বুধবার সকালে নিতাই ইউনিয়নের বাড়ী মধুপুর এলাকার গিয়ে দেখা মেলে সুবিধাভোগী ‘চিনু বালার (৫৩) সাথে। বাবা শরৎ চন্দ্রের ঘরে ৫৩ বছর আগে জন্মগ্রহন করেন চিনু বালা। বাবাও ছিল একজন ভিক্ষুক। জন্মগত ভাবে চিনু বালা একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। পরিবারে আছেন মা শৈল বালা। অবিবাহিত চিনু বালা বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মায়ের ঘাড়ে বোঝা হয়ে জীবন যাপন করছেন। বসবাস করে থাকার মত জমিও নেই চিনু বালার বাবা মায়ের। ওই গ্রামের একজনের জমিতে টিনের ছাউনি দিয়ে কোনমতে দিনাতি পাত করছেন দীর্ঘদিন থেকে। বৃদ্ধ মাকে সাথে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে জীবন চলতো চিনু বালার। কিন্তু হঠাৎ সেই ভিক্ষাও বন্ধ হয়ে যায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্দিকুর রহমানের উদ্যোগের ফলে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্দিকুর রহমান সারা দেশে প্রথম উদ্যোগ গ্রহন করে কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুক মুক্ত করেন। পূনর্বাসিত করা হয় উপজেলার সকল ভিক্ষুককে। চিনু বালাও তার ব্যতিক্রম নয়। মুজিব শত বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য একটি করে আধা পাকা ঘর বরাদ্দ আসে। উপজেলা প্রশাসন থেকে চিনু বালার বাড়ীতে যাওয়া হয়। সরকার থেকে বাড়ী পাওয়ার কথা শূনে মা শৈল বালা ও চিনু বালা কাঁদতে থাকে। তাদের শুধু আর্তনাদ একটি থাকার ঘরের। প্রধানমন্ত্রীর উপহার সেই স্বপ্নের নীড়’র অবকাঠামোর কথা শুনে চিনু বালার মুখে আনন্দের হাসি। দু’হাত মাটিতে রেখে পূজা অর্চনা করে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্য আশির্বাদ (দোয়া) করতে থাকেন। বলতে থাকেন, যায় ঘর দেবে মোক তাক ঝুনি ভগবান সুখোত থোয়। ভগবান তাক (তাকে) দীর্ঘ দিন বাঁচে থুইবে’।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবিধাভোগীর স্বপ্নের নীড় উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের সাথে সাথে তাদের কাছে তাদের বাড়ী হস্তান্তর করা হবে।
জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ী দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন,খুবই চমৎকার ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার’র নেতৃত্বে কাজ হয়েছে। খুব সুন্দর হয়েছে বাড়ী গুলো। এজন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা বেগমকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
Leave a Reply