আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম:
তামাক বিরোধী প্রচারণায় ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে এসপিকের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ৩১ ডিসেম্বর জামালপুর এসপিকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছে। তামাকের ক্ষতিক্ষর বিষয়গুলো এখন আর কারো অজানা নয়। তারপরও মানুষ বিশেষ করে তরুন যুব সমাজ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে। কারণ তামাক কোম্পানির লোভনীয় প্রলোভন মূলক বিভিন্ন পুরস্কার ঘোষণা, স্বাস্থ্য বিধি ক্ষুদ্র আকারে উল্লেখসহ চটকদার বিজ্ঞাপনে তামাক সেবনে উৎসাহিত হচ্ছে যুব সমাজ।
তামাক কোম্পানীগুলো তরুন যুব সমাজকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ প্রদান, টিশার্ট উপহার, মোবাইল ফোনে চমকদার মেছেজ প্রদান, সিগারেট পান করলে স্মার্ট লাগে ইত্যাদি অসৎ প্রচারণার মাধ্যমে দেশের তরুন যুব সমাজকে প্রলোভনের ফাঁধে ফেলে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে। যদিও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করা হচ্ছে নানা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক হলেও বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে তামাক কোম্পানিগুলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে একজন অধূমপায়ীর তুলনায় একজন ধূমপায়ীর করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি ১৪ গুণ বেশী। এসকল তথ্য জানার পরও তামাক নিয়ন্ত্রনে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তামাক কোম্পানীগুলো সারা বছরজুড়েই বিভিন্ন কুটকৌশল অবলম্বন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ২০২০-২১ বাজেটে তামাকের উপর বর্ধিত কর প্রত্যাহারের দাবি। অথচ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো দাম বাড়িয়ে একে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে আনা। এতে একইসঙ্গে তামাকের ব্যবহার কমে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাংলাদেশে জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ তামাক কর কাঠামোর জন্য তা তামাক নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। তাই বাংলাদেশে কার্যকর তামাক কর ব্যবস্থার জন্য ‘জাতীয় তামাক কর নীতি’ প্রণয়ন জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে সে লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি বিস্তৃত তামাক কর নীতি গ্রহণের কথা বলেছেন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণে অতি সত্ত্বর জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে। যার মধ্যে করারোপসহ, কর আদায় পদ্ধতি ও পর্যবেক্ষণ, ট্রাকিং ও ট্রেসিং, কর ফাঁকি বন্ধ, আমদানি-রপ্তানি, তামাক করসংক্রান্ত প্রশাসনিক বিষয়াদিসহ তামাক করসংশ্লিষ্ট সকল বিষয়াদি যুক্ত থাকবে। বাংলাদেশে মূল্যের ওপর শতাংশ হারে করারোপের ফলে তা তামাক নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে কোন অবদান রাখছে না বরং তা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তামাক কোস্পানির মুনাফা বৃদ্ধি করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালে করা এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশের ১২ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত নানা ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, যক্ষ্মা, প্যারালাইসিস, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টসহ প্রধান আটটি রোগে আক্রান্ত হয়। এর ফলে রোগীর চিকিৎসা, অকালমৃত্যু, পঙ্গুত্বের কারণে বছরে দেশের অর্থনীতিতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। তামাক ব্যবহারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বছরে নিট ক্ষতির পরিমাণ ওই সময় অনুযায়ী ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
প্রতিবছর সিগারেট ক্রয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ ও বিড়ি ক্রয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয় হয়। বর্তমানে এই ক্ষতির পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেড়েছে। একটি পরিবারের কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়। আর কোনো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যখন তামাকের কারণে মারা যান বা রোগাক্রান্ত হন, তখন সেই পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এই ক্ষতি হিসাবের বাইরে।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার প্রতিরোধ ও মাদক নিয়ন্ত্রেণে সম্প্রতি জামালপুরে এসপিকে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের টেকনিক্যাল সার্পোটে জামালপুর জেলায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানীগুলো ২০২০ সালে কি ধরনের কৌশল অনুসরণ করেছে সে বিষয়ে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অত্র এলাকায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিতে কার্যরত সংস্থার প্রেরণকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করে এর উপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়াতামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার প্রতিরোধ বিদ্যমান আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে এসপিকে জনসচেতনতামূলক সামাজিক কার্যক্রম করছে।
Leave a Reply