বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:২০ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
কসবা ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের নতুন ভর্তির মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত আল্লামা মরহুম গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর দোয়া মাহফিল সম্পন্ন কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস
রক্তদান বিষয়ে যা বলছে ইসলাম

রক্তদান বিষয়ে যা বলছে ইসলাম

স্বেচ্ছায় নিজের রক্ত অন্য কারো প্রয়োজনে দান করাই রক্তদান। রক্ত দানকারীগণ খুবই ভাগ্যবান। দুনিয়াতেও তাদের উপকার, আখেরাতেও তাদের উপকার। দুনিয়ার ফায়দাটা দুই ধরনের। একটি হলো ব্যক্তিগত ফায়দা আর অন্যটি হলো জনগণের ফায়দা।

ব্যক্তিগত ফায়দার কথা বলা হলে, বলতে হবে যে, রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ‘বোনম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়, ঘাটতি পূরণ হয়। বছরে তিনবার রক্তদান শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়ায়। নিয়মিত রক্তদানকারীর হার্ট ও লিভার ভালো থাকে। রক্তদান অনেক ক্ষেত্রে ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। স্থূলদেহী মানুষের ওজন কমাতে রক্তদান সহায়ক।

তবে রক্তদাতাকে অবশ্যই পূর্ণবয়স্ক অর্থাত্ ১৮ বছর বয়স হতে হয়। প্রতি তিন মাস অন্তর প্রত্যেক সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে রক্তদান করতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যে কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। তবে রক্তদানের পদ্ধতি ও পরবর্তী প্রভাব সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অযথা ভীতির কারণেই মূলত অনেকে রক্ত দিতে দ্বিধান্বিত হন।

রক্ত দেওয়া কখন বৈধ :রক্ত শরীরের ভেতরে থাকাবস্থায় পবিত্র। আর শরীর থেকে বের হয়ে গেলে অপবিত্র। এর আসল দাবি হলো, অন্যের শরীরে রক্ত দেওয়া হারাম হওয়া। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় (প্রয়োজন ও কারণ ছাড়া) এক জনের রক্ত অন্যের শরীরে স্থানান্তর করা শরিয়তে নিষেধ। তাই রক্ত গ্রহণের বিকল্প নেই, এমন অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

১. যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তির জীবননাশের আশঙ্কা দেখা দেয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে, তার শরীরে অন্যের রক্ত দেওয়া ব্যতীত বাঁচানোর কোনো পন্থা না থাকে, তখন রক্ত দিতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং এ ক্ষেত্রে ইসলাম আরো উত্সাহ দিয়েছে। ২. রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। অর্থাত্ অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা নেই বটে, কিন্তু রক্ত দেওয়া ছাড়া তার জীবনের ঝুঁকি বাড়ে অথবা রোগমুক্তি বিলম্বিত হয়; এমন অবস্থায় রক্ত দেওয়া জায়েজ ও জরুরি। ৩. যখন রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দেয় না, বরং রক্ত না দেওয়ার অবকাশ থাকে; তখন অযথা রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ৪. যখন জীবননাশের এবং অসুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে, বরং শুধু শক্তি বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে হয়; সে অবস্থায় ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক রক্তদান জায়েজ নয়। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ৫/৩৫৫; রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৮৯)

ফকিহগণ নারীর দুধের ওপর কিয়াস (তুলনা) করে রক্ত দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। অর্থাত্ যেভাবে বাচ্চার জন্য দুধ পান করার সময়ে মানুষের অংশ হওয়া সত্ত্বেও নারীর দুধ পান করা বৈধ। ঠিক তেমনিভাবে প্রয়োজনের সময় মানুষের রক্ত অন্য মানুষের মধ্যে স্থানান্তর করাও বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য হারাম (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস ও যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য উত্সর্গ করা হয়ে থাকে। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানি ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোনো পাপ নেই।’ (সুরা বাকারা : ১৭৩)

‘সুরা মায়িদা :০৩)

বৈধ ক্ষেত্রে রক্তদান অনেক সওয়াবের কাজ। এতে একটি প্রাণকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে কোনো এক জন ব্যক্তির জীবন রক্ষা করল সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল।’ (সুরা মায়িদা : ৩২)।

রক্ত বেচাকেনা : রক্ত দেওয়া বৈধ তবে এর বিনিময় নেওয়া অবৈধ। কিন্তু যে শর্তের ভিত্তিতে রক্ত দেওয়া জায়েজ, ঐ অবস্থায় যদি রক্ত বিনামূল্যে পাওয়া না যায়, তখন তার জন্য মূল্য দিয়ে রক্ত ক্রয় করা জায়েজ। তবে যে রক্ত দেবে তার জন্য রক্তের মূল্য নেওয়া জায়েজ নয়। রক্ত কেনা কিংবা বেচা উভয়ই মানব জীবননাশের আশঙ্কা তৈরি করে। (আল বাহরুর রায়েক : ৬/১১৫; জাওয়াহিরুল ফিকহ :২/৩৮)

অমুসলিমদের রক্ত দেওয়া বা নেওয়া :অমুসলিম থেকে রক্ত নেওয়া ঠিক নয়। তবে রক্ত নিয়ে নিলে এতে করে মুসলমান রোগী কাফের হয়ে যাবে না। তার সন্তানাদিও কাফের হয়ে জন্ম নেবে না। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, কাফের, পাপিষ্ঠ ব্যক্তিদের রক্তে যে খারাপ প্রভাব থাকে এর প্রভাব খোদাভীরু মুসলমানের রক্তে পড়ার শক্তিশালী সম্ভাবনা বিদ্যমান। এজন্য যথাসম্ভব এদের রক্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকাই উচিত। হ্যাঁ, তাদের রক্ত দিতে কোনো সমস্যা নেই। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া :১৮/৩৩৩; জাওয়াহিরুল ফিকহ : ২/৪০)

স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে রক্তদানের বিধান :স্বামী স্ত্রীকে রক্ত দেওয়া, স্ত্রী স্বামীকে রক্ত দেওয়া জায়েজ। রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা একে-অন্যের জন্য অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মতো। তারা একে-অন্যকে রক্ত দিলে বিয়ের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। বৈবাহিক সম্পর্কও যথারীতি বহাল থাকে। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : ২/৪০)

ওষুধ হিসেবে রক্তের ব্যবহার :মানুষের রক্ত ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা জায়েজ নেই। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ১৮/৩২৮)

ব্লাড ব্যাংকে রক্তদান : রক্তের ব্যাংক যেখানে লোকেরা স্বেচ্ছায় রক্ত দান করে এবং তারা ব্যাংকগুলো অভাবগ্রস্তকে বিনামূল্যে রক্ত সরবরাহ করে সেখানে মুসলমানদের জন্য রক্তদান করা জায়েজ। এটি মানব সেবার অন্তর্ভুক্ত। (কিতাবুন নাওয়াজিল : ১৬/২১৫) আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নিয়মিত রক্তদান করে অসুস্থ মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD