বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে কসবায় রাতের আঁধারে চলছিল পাহাড় কাটা

শৈলগাছী রাজবাড়ি, নওগাঁ

ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম।।

জেলা সদর নওগাঁ থেকে প্রায় ১০ কি. মি. দক্ষিণ দিকে এই রাজবাড়িটি অবস্থিত। শহরের গোস্ত হাটির মোড় থেকে যে কোনো যানবাহনে চড়ে স্থানটিতে অনায়াসে গমনাগমন করা যায়। আবার আত্রাই-নওগাঁ সড়কের বেতগাড়ি নামক বাজার থেকেও পাকা সড়কযোগে এই রাজবাড়িতে আসা যায়। ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী স্থানে এক মনোরম দৃশ্য ও পরিবেশে রাজবাড়িটি অবস্থিত। কাশিমপুর রাজবাড়ি থেকে এটির দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। দুবলহাটি রাজবংশের একটি শাখা শৈলগাছী রাজবাড়ি। এখানে ধুবলহাটির জমিদার তাঁর বাসস্থান নির্মাণ করেছিলেন। তবে এখানকার জমিদারির অংশ বিশেষ ছিল ক্ষুদ্র পরিসরে বিরাজমান। এই রাজবাড়ির বংশোৎপত্তির ইতিবৃত্ত হিসেবে জানা যায়, রাজা পরমেশ্বর রায়ের দুই পুত্র। বড় পুত্রের নাম শিবনাথ রায় ও দ্বিতীয় পুত্রের নাম কাশীনাথ রায়। পিতা পরমেশ্বরের মৃত্যু ঘটলে জ্যেষ্ঠ পুত্র শিবনাথ রায় রাজত্ব গ্রহণ করেন। আর কনিষ্ঠ ভ্রাতা কাশীনাথ মাসিক মাসোহারা নিয়ে স্বতন্ত্র স্থানে বাস করতে থাকেন। শিবনাথের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র কৃষ্ণনাথ পিতৃরাজ্যের অধিকারী হন। এমন সময়ে পরমেশ্বরের কনিষ্ঠপুত্র কাশীনাথ দুবলহাটি রাজ্যের অংশ পাবার চেষ্টা করেন। তবে তিনি এই চেষ্টায় কৃতকার্য হতে পারেননি। রঘুনাথের পত্নী বিদ্যাধরী অপত্য স্নেহবশত তাঁর পতির দুবলহাটি রাজ্যের দান করা ৯০ আনা অংশ পরমেশ্বরের কনিষ্ঠ পুত্র কাশীনাথকে হেবানামাসূত্রে দান করে পরলোকে যান। ইতিহাসের সাক্ষ্য ও ঘটনা পরম্পরায় জানা যায়, কাশীনাথ সময় থেকে শৈলগাছী রাজবংশের উৎপত্তি।
কাশীনাথের বংশধরগণ দুবলহাটির ৯০ আনির জমিদারির মালিক হিসেবে পরিচিত। কাশীনাথের পুত্র গৌরনারায়ণ এবং গৌরনারায়ণের পুত্র ছিলেন গোলকনাথ। এই গোলকনাথ ছিলেন স্বধর্মপরায়ণ ও অতিথি সেবায় অতিশয় অনুরক্ত। তাঁর সমকালে যে কোনো মানুষ গৃহে আসলে তিনি সৎকারের ব্যবস্থা করতেন। সৎকার না করে কোনো মানুষ তাঁর দরবার থেকে ফিরে যেতে পারতেন না। তিনি ছিলেন অপুত্রক। গোলকনাথ পরলোকে গমন করলে তাঁর পত্নী এক দত্তক পুত্র গ্রহণ করেন। প্রায় ১৫ বিঘা বা ৫ একর জমির উপর এই জমিদার বাড়িটির অবস্থান। জমিদার বাড়ির মূলভবনটি পূর্বমুখী। তবে প্রবেশদ্বার দক্ষিণে অবস্থিত। ভবনের পূর্বদিকে ছোটো যমুনা নদী, দক্ষিণে উঠান বা প্রশস্ত ফাঁকা জায়গা। মূল ভবনের সম্মুখে ৭টি মিনা করা গোলাকার প্রকৃতির পিলার আছে। তবে রাজবাড়ির নিদর্শন ঐতিহ্যগতভাবে এখনো রয়েছে। মূল ভবনের উত্তর দিকে একটি প্রশস্ত বারান্দা আছে। ১২টি পিলার দিয়ে সেই বারান্দার ছাদ নির্মিত। বারান্দার আয়তন ৮’-১০০” বিশিষ্ট। পিলারগুলো মিনা ও খোদাইকৃত। ভবনের ছাদের নিচে লোহার বরগা দিয়ে ছাদ দেয়া হয়েছে। মূল ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কর্ণারে রয়েছে একটি নাট্যশালা। জমিদার বাড়িতে মোট কক্ষ ছিল ২২টি। ভবনের উত্তর দিকে একটি গলিপথ রয়েছে, সে গলিপথ দিয়ে জমিদার পরিবারের সদস্যগণ নদীপৃষ্ঠে হাওয়া খেতে যেতেন। উত্তর ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি পৃথক কক্ষ আছে, কক্ষটি হাওয়াখানা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। জমিদার যে কক্ষটিতে বাস করতেন সে কক্ষের আয়তন ১১’-৪”×২৫’-৫”। পরবর্তীতে এই জমিদারির বহু উত্থান-পতন ঘটেছিল। জমিদারের প্রস্থানের পর থেকে স্থানটিতে আর সেই ঐতিহ্য নেই। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িতে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ‘শৈলগাছি উচ্চ বিদ্যালয়’ নামের এই স্কুলটি জমিদার বাড়িতে অবস্থিত। কিছু অংশ বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় বিদ্যমান। জমিদার বাড়ির কয়েকটি কক্ষে শৈলগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন কর্মচারি বাস করছেন। তবে এই জমিদারির ধ্বংস বিশেষ ও ঐতিহ্য এখনো দৃশ্যমান। তবে তার জৌলুস আর নেই।

ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম
গবেষক,প্রাবন্ধিক, ইতিহাসজ্ঞ

সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
বাংলা বিভাগ নওগাঁ সরকারি কলেজ,

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD