রোকেয়া ইসলাম
টিভি মুভি অন্য কোন বিনোদনে মন নেই একদম দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না দৈনিক পত্রিকা বাসায় আসা কঠিনভাবে নিষেধ। হকার ছেলেটিও গ্রামে চলে গেছে। ফেসবুকে বসার অদম্য ইচ্ছাও চাগিয়ে উঠছে না। এতোবার স্ট্যাটাস দেবার পরও ইনবক্স ভরে যায় না না রকম ভীতিকর ছবি ও খবরে মনটা সিটিয়ে থাকে সারাক্ষণ। এরা কি ধরনের মানসিকতা বহন করে কে জানে। আত্মসম্মানবোধ বলেও তো একটা শব্দ আছে এটা তারা কিভাবে বিস্মৃত হয় কে জানে।
আরে তোরা যেমন এগুলো জানিস আমিও জানি এবং মানি। অন্যের ইনবক্সে ঝামেলা না করে নিজে এবং পরিবারের সবাই মিলে বাড়িতে এগুলো এ্যাপ্লাই কর কাজে দেবে।
ফালতু জনসেবার নামে গুজব আর ভীতি ছড়ানো। করোনা ভিতি ছড়িয়ে আতংকগ্রস্থ করার কোন মানে আছে। সমস্ত বিশ্ব এখন করোনায় নাস্তানাবুদ হয়ে আছে। কে কখন ঝরে যায় কে জানে। সঠিক চিকিৎসাও তো নেই এই ভয়াবহ রোগের।
সামনের নেতিয়ে পড়ে থাকা ফাঁকা রাস্তায় চোখ যায় পারুলের। রাস্তার ওপারের মার্কেটের দোকানের সাটার সেঁটে দাঁড়িয়ে আছে এক তরূণী। পরনে কিছুটা মলিন কড়া রঙের সালোয়ার কামিজ ওরনা।
মেজাজ বিগড়ে যায়। এই ভয়াবহ সঙ্গ -নিরোধ কালেও শরীর বেঁচতে হবে।
ক্ষুধা আছে জানি মোটামুটি সাহায্য সহযোগিতা পৌঁছে গেছে জনে জনে। যদিও অপ্রতুল।
আরে বাবা কিছু তো পেয়েছিল সেটুকু খেয়েই থাক তবুও বেঁচে থাক।
পারুল কিছু চাল ডাল দিতে চায়।
যা আজকের মত কিছুটা নিয়েই বাড়ি যা। তবুও শরীর বেঁচিস না এই মরন সংকটে।
ভেতরে গিয়ে কেজি পাঁচেক চাল এককেজি ডাল তিন কেজি আলু তেল পিয়াজ মরিচ লবন দিয়ে বেশ বড়সড় একটা পোটলা বাঁধে।
গেটে তালা দেয়া আছে বলে রক্ষা নইলে এধরনের মেয়েদের সাথে এ বাড়ি থেকে কখনও কথা বলা হয় না।
পারুল রাস্তার শরীর বেঁচনেওয়ালাদের সাথে কথা বলছে এটা নিয়ে তুলকালাম হয়ে যাবে বাসায়।যারা ওকে কড়া ভাষায় বকা দিতে পারবেনা তারাও পুষিয়ে নেবার জন্য মহা গরম দৃষ্টি হাঁনবে ওর মুখে।
মেয়েটির পেটের ক্ষুধাকে প্রাধান্য দিচ্ছে এটা বললে তেমন কোন বড় ধরনের সমস্যা হবে না বাসায়।
গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে একটু জোরে ডাক দেয়।
ঃগেটের কাছে এসে দাঁড়াও। তাড়াতাড়ি এসো।
নিজে সাহায্যকারী মেয়েটিকে নিয়ে তিন তলা থেকে দুপদাপ করে পোটলাসহ নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে গেট খুলে পোটলা বের করে দেয়।
ঃএটুকু নিয়ে চলে যাও। কম খাও তবুও বেঁচে থাক। বেঁচে থাকলে ব্যাবসা করো। এখন বাড়ি যাও।
ঃআমি তো ব্যাবসা করি না।
ঃতাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন।
ঃ আপনেগো বড়লুকের কাজকারবার বুঝি না।
ঝাঁঝলো কন্ঠ কানে বাজে পারুলের। চোখ দুটো লাল করে তাকায়। কি আছে ঐ চোখে। রাগ ঘৃণা জ্বালা। কিন্তু কেন। পারুলের প্রতি কেন।
ঃ গারমিন্সে চাকরি করি।মালিক আইতে কইছে । আইছি। অহন বাসায় ঢুকতে দেয় না বাড়িওয়ালা।
সরে আসে পারুল।
ঃব্যাবসাটা আপনেরা করেন মাইনষের জীবন নিয়ে করেন। মানুষ নিয়ে খ্যালেন।
ততোক্ষণে পোটলাটা ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলেছে সাহায্যকারী। ছোট মেয়েটিও বুঝে গেছে এখন এই খাদ্য পোটলাটাও ওর কাছে বোঝা।
মেয়েটি কোথায় যাবে ভাবনাটা বিব্রত করে পারুলকে —
যাদের ভাবনা তারা তো একটা ঘোষণা দিয়েই দিয়েছে তবুও পারুল কিসের দায়ে বিব্রত হচ্ছে —
একটু আড়ালে দাঁড়ায় পারুল। মেয়েটি গজ গজ করতে থাকে।
ঃ বড়লুক খালি ট্যাকার হিসাব বুঝে কথার হিসাব বুঝে-না। বুঝ কইরা কথা কওন লাগে। গায়ের জোড়ে মানুষ ঠ্যালবার চায়।
আরো একটু আড়ালে যায় পারুল।
ঃ হায়রে বড়লুক কবে যে মানুষরে মানুষ ভাবতে পারবি —
দীর্ঘশ্বাষেরর সাথে বেরিয়ে আসে কথাগুলোর অনুরণন ছড়িয়ে পড়ে বহুদূর।
হায় কি মহামারী এলো যাতে মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যায়। ভাবতে গিয়ে থমকে যায় পারুল শুধু মানুষের প্রতি কেন নিজের উপর নিজেরই কি বিশ্বাস আছে এই সময়ে।
বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাষ বের হয় হায় সময়!!!
Leave a Reply