আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম:
জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালের চর ইউপির দারুত তাক্বওয়া মহিলা কওমী মাদরাসার আবাসিক হল থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় মাদরাসার মুহতামিমসহ ৪ শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। একই সাথে অভিভাবকদের কাছে আবাসিকের সকল ছাত্রীকে হস্তান্তর করে মাদরাসাটির পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
আটক চার শিক্ষক হলেন- মাদরাসার মুহতামিম আসাদুজ্জামান, সহকারি শিক্ষক রাবেয়া আক্তার, শুকরিয়া আক্তার ও ইলিয়াস হোসেন।
তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় তাদের অভিভাবকরা সোমবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ দুপুরে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং বিকালে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও একটি জিডি করেন। অভিভাবকদের জিডির প্রেক্ষিতে রাতেই উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের বাংলা বাজারে অবস্থিত সভুকড়া দারুতাক্কুয়া মহিলা কওমি মাদরাসার চার শিক্ষককে আটক করা হয়।
থানা সূত্রে জানা গেছে নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থী হলো- উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের পোড়ার চর সরদার পাড়া গ্রামের মাফেজ শেখের মেয়ে মিম আক্তার (৯), গোয়ালের চর ইউনিয়নের সভুকড়া গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে মনিরা খাতুন (১১) ও দক্ষিণ সভুকুড়া গ্রামের সুরুজ্জামানের মেয়ে সূর্যবানু (১০)।
নিখোঁজ মীমের মা হাসিনা বেগম জানান, ‘মেয়েকে ১৫ দিন আগে মাদরাসায় রেখে আসি। রবিবার দুপুরে মাদরাসার হুজুরের মাধ্যমে জানতে পারি যে, মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে।’
নিখোঁজ মনিরা খাতুনের বাবা মনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, তিনি তার মেয়েকে ৯ দিন আগে মাদরাসায় দিয়ে আসেন। রবিবার দুপুরে শুনি তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
নিখোঁজ সূর্যবানুর বাবা সুরুজ্জামান জানান, ‘১৫ দিন আগে মেয়েকে মাদরাসায় রেখে আসি। রবিবার দুপুরে মাদরাসা থেকে জানানো হয় যে, মীমকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েকে পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজের ঘটনায় পরদিন দুপুরে শিক্ষার্থীদের
অভিভাবকরা জিডি করার পর বিকেলে মাদরাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) মাও. মো. আসাদুজ্জামান ইসলামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নম্বর ৫১১।
মাদরাসার মুহতামিম আসাদুজ্জামান জানান, রবিবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ছাত্রীদেরকে ডেকে উঠানো হয়। সবাই নামাজ পড়তে গেল ওই তিন ছাত্রী পেছনের জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে অবিভাবকদের জানানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বাংলাবাজার এলাকার দারুত তাক্বওয়া মহিলা কওমী মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীরা শনিবার রাতে মাদরাসার আবাসিক কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে। রবিবার ভোরে শিক্ষকরা ফজরের নামাজ পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেন। অন্য ছাত্রীদের মতোই নিখোঁজ শিশুরাও নামাজের প্রস্তুতি নেয়। নামাজের পর তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ইসলামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাজেদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, অভিভাবকরা থানায় জিডি করার পর মাদরাসায় পুলিশ পাঠানো হয়। শিক্ষকদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদরাসার মুহতামিমসহ চার শিক্ষকে থানায় আনা হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে পুলিশ।
গণমাধ্যমকে ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোরশেদ বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজ, চার শিক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক এবং মাদরাসার পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
Leave a Reply