”
বি/ন/য়/ম/ন্ড/ল
.
বঙ্গবন্ধু; সেদিন টুঙ্গিপাড়ায় বাইগার নদীর পাড়ে তোমার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম। লাল সিরামিক-ইট আর সাদা কালো মার্বেল পাথরে নির্মিত তোমার সমাধি। সমাধির উপরের দেয়ালে জাফরি কাটা-আলো ছায়ার মায়ারী খেলা চলে। কারুকাজ করা কাঁচের ভিতর দিয়ে আলো ছড়িয়ে পড়ে সমাধিতে। চারিদিকে কালো-মাঝ খানে সাদা মার্বেল পাথর-ওপরে ফাঁকা। কিছু সময় নিম্তব্দ হয়ে দাঁড়াই। তোমার উর্বর মাটিতে পা রাখতেই গা ছম ছম করে ওঠে। তোমার সমাধি জুড়ে লাল কাগুজে ফুল-শিরিস-দেবদারু-চম্বল অনবরত ছায়া দিয়ে যায়। চোখে পড়ে কৃত্রিম চঞ্চলা ঝর্ণা। যেন তুমি আজও পদ্মা-যমুনা-গৌরি-মেঘনার মতো বহমান।
.
নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হলো-তোমার স্বপ্নগুলো জোৎস্নার মতো শব্দহীন কৃত্রিম ঝর্ণার জল রঙে জেগে উঠেছে। মনে হলো বার বার তোমার বেদীতে কাগুজে ফুল-তোমার বুকের রক্তক্ষরণ বহন করেছে যুগযুগ। নোনা অশ্রু দেখে-চোখ ভিজে যায়-আবার সান্ত্বনায় মুছে ফেলি জল। কিছু দূরে-তোমার টোল পড়া গালের প্রথম প্রভাত-ঐতিহ্যবাহী বড় তালাব পুকুর ঘাট। যে শান বাঁধানো ঘাটে তুমি পা ভিজিয়ে উর্বর করেছো পলি। চারিদিকে তোমার ভাষাহীন দুটি চোখ। হাসনাহেনা-গোলাপ-টগর আজও সাক্ষ্য দেয় তোমার বিপ্লবী মুখ। মুহুর্তে আমার রক্ত ফিনকি দিয়ে ওঠে-প্রতিধ্বিনিত হই-নিজেই নিজের ভিতর। সমুদ্রের টানের মতো দিশাহীন সম্মুখে এগিয়ে যাই। শান বাঁধানো পুকুর ঘাটের পাশে সাড়ি সাড়ি দেবদারু-তোমার প্রিয় বালিশা আমগাছ-বকুলতলা চত্ত্বর-হিজল তলা ঘাট-যেখানে তুমি ছোট বেলায় গোসল করতে। তোমার উর্বর দশ মাটিতে আমার পা-চোখ আটকে গেলো-দেখে বুকের মধ্যে রক্তক্ষরণ হলো: যে সামরিক হেলিক্যাপ্টার তোমার দেহ টুঙ্গিপাড়া নিয়ে গিয়েছিল-সেটি আজও অক্ষত আছে।
.
সামনে শেখ রাসেল শিশু পার্ক-আর একবার ভিজে গেলো চোখ। মনে পড়ে গেলো-রাসেলের আর্তনাত-আমি মায়ের কাছে যাবো। হায়নারা-বুলেটে যার বুক ঝাঝরা করেছিল।
.
পিতা তুমি শুয়ে থাকো-তোমার শিমুল-জারুল-পলাশ-গোলাপ-টগর কিংবা তোমার প্রিয় বালিশা আম গাছের নিচে। তোমার বেদির কাছে আজও দেবদারু মাথা উঁচু করে আছে। তোমার প্রিয় পদ্ম বিলে লাল রক্তাক্ত পদ্ম ব্যথায় কাতর। জানালার ওপাশে শুধু তোমার একজোড়া চোখ জেগে থাক প্রিয় টুঙ্গিপাড়ার পলি মাটি জুড়ে। আমরা না হয় ইশারায় কথা কই-হেঁটে যাই তোমার ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল গন্তব্য জুড়ে।
.
টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
ছবিঃ ১১ আগষ্ট, ২০২০
Leave a Reply