শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:১০ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
ঐতিহ্যবাহী আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের ৮৬ তম ইছালে ছাওয়াব মাহফিল আজ কৃষক জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে কসবায় কৃষক সভা অনুষ্ঠিত রাজধানীতে ঐশী বাংলা জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন-২০২৫ সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান ভূইয়ার জানাযা ও দাফন সম্পন্ন কসবা ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের নতুন ভর্তির মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত আল্লামা মরহুম গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর দোয়া মাহফিল সম্পন্ন কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের

প্রতীক্ষা

রোকেয়া ইসলাম
বাবুল আজও বন্ধ দোকানটার সামনে এসে দাঁড়ায়। যতদূর চোখ যায় পুরো রাস্তা খা খা করছে। দোকানপাট বন্ধ। বাড়ির গেটগুলো বন্ধ। ছোট একটা টংএর চায়ের দোকানে কাজ করে ও। সাতজনের সংসারে দুজন রোজগারে। মা অবশ্য বিকেলে অসুস্থ শরীর নিয়ে এক বাড়িতে কয়েকখান রুটি বেলে দেয়।
বাবুল এই চায়ের দোকানে দিন চুক্তিতে কাজ করে। রাতেরবেলা সব ধুয়ে গুছিয়ে যখন বাড়ি ফিরে তখন মৌসুমি আপু সেজেগুজে বের হয়। খুব ছোটবেলায় জিজ্ঞেস করেছিল আপু বলেছে ডিউটিতে যায়। পরে আর কোনদিন জিজ্ঞেস করেনি। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর এমনি এমনি জানা হয়ে যায়। মৌসুমি আপুর বিষয়টিও তেমনি।
বড়ভাই কবি অনেকবেলা অবধি ঘুমায়। বিকেলবেলা বাইরে যায় ধোয়া কাপড় পরে বাইরে যায়। বাবুলের সাথেই ঘরে ফিরে। বাবুল মহাজনের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যায়। সেটুকুই ভাগাভাগি করে খায় দুই ভাই।
-বুঝলি বাবুল আমাদের এইদিন বেশিদিন থাকব না।
-কি অইব ভাই
-আমি ব্যবসার চেষ্টা করতাছি। এই অইলো বইলা। অইলেই ব্যবাককিছু ঠিক অইয়া যাইবনে।
-তহন মৌসুমি আপুরে বিয়া দিবা
আবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বাবুলের মুখের দিকে। মূহুর্তেই সামলে নেয় নিজেকে।
-হ হ দিমু হেইডাই আগে করুম। দে দুগা ভাত দে। তর তো কম অইব না।
-না তুমি ভাত লও।
-লেহালেহি করিতো। মাথায় জোর লাগে।
একজনের খাবার দুজনে ভাগাভাগি করে খায়। বাবুল জানে দুপুরে ও পেট ভরে খেলেও বড়ভাই ঊনাপেটেই ছিল এতোটা রাত অবধি।

দোকান বন্ধ মহাজনের বাড়িতে বাবুলের তিনবেলা খাওয়া বন্ধ। রোজকার মায়না বন্ধ।
বাবুল দেখেছে মৌসুমি আপু কাল রাতে বের হয়েছিল কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে গিয়েছে কোঁকাতে কোঁকাতে। হয়তো পুলিশের প্যাদানি খেয়ে ফিরেছে।

হঠাৎ একটা গাড়ি থামে কয়েকটি বস্তা বের করতেই আশপাশ থেকে অনেক মানুষজন জড়ো হয়। বাবুলও দাঁড়িয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় হুটোপুটি।
এতো লোক কোথায় ছিল। মনে হয় মাটি ফুঁড়ে বের হয়।
মূহুর্তেই বাঁশি বাজাতে বাজাতে পুলিশের গাড়ি এসে হাজির।
অনেক চেষ্টা করেও লাইন ঠিক করতে পারে না।
-ওঠা ওঠা বস্তা ওঠা এখনই সাংবাদিক দেখে রিপোর্ট করবে আমরা করোনা উৎপাদন করছি।
মাথায় নীল কাপড়ের টুকরো বাঁধা ছেলেগুলা বস্তা গাড়িতে তুলে ফেলে। আর যারা জড়ো হয়েছিল তারা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
– শুনেন আপনারা সামনের স্কুলের মাঠে আসেন আছি আমরা। আসেন।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফুস করে চলে যায়। গাড়ির পেছনে পেছনে ছুটতে থাকে মানুষ।
বাবুলের চেনা স্কুল ও সবাইকে পেছনে ফেলে পৌঁছে যায়। ওর আগেই গাড়ি পৌঁছে গেছে।
দারোয়ানকে দিয়ে গেট খুলে গাড়ি ঢুকে যায় স্কুলের মাঠে। কয়েকজন ছেলে গেটের কাছে দাঁড়ায়।
– লাইন ঠিক করে দাঁড়ান আপনারা। আপনাদের জন্যই এনেছি আপনাদেরকেই দেব।
খুব ভালো লাগছে বাবুলের। ও সবার আগে এসেছে লাইনের সামনে দাঁড়িয়েছে। মাথা ঘুরিয়ে দেখে পেছনে অনেক মানুস। ওদের পাশের ঘরের ইছুপ চাচাও আছে চাচীও আছে। ওদের দেখে মনে জোর পায় বাবুল।
চাচা বুড়া মানুষ বোঝা টানতে না পারলে বাবুল ঘাড়ে করে বোঝা নিয়ে বাসায় পৌঁছে দেবে। ছেলেগুলো বন্ধ গেটের এপাশে দাঁড়িয়ে লাইন সোজা করছে। বাবুলও মানুষের লাইন সোজা করার কাজে লেগে যায়।
মাথায় নীল রঙের কাপড় বাঁধা একজন এগিয়ে এসে পকেট থেকে এক টুকরো নীল রঙের কাপড় ওর মাথায় বেঁধে দিতেই ওর ভেতর অন্যরকমের জোর চলে আসে।
ওখন ওদেরই একজন।
সবার হাতে একটা করে বস্তা তুলে দিতে থাকে। একজন একজন করে গেট দিয়ে বের করে দেয়।
আস্তে আস্তে গাড়ি খালি হয়ে যায়। তবুও মাঠে বস্তা না পাওয়া চার পাঁচজন দাঁড়িয়ে থাকে।
ছেলেগুলো না পাওয়া লোকগুলোকে কাছে ডেকে নিজেদের পকেটে থেকে টাকা বের করে ভাগ করে দেয়। লোকগুলো নিজেদের কপালের দোষ আর ছেলেগুলোর বিতরণ ব্যাবস্থার ক্রুটি নিয়ে আলোচনা করতে করতে চলে যায়।
হঠাৎ একজনের চোখ পড়ে বাবলুর দিকে। ওকে দেবার মত আর তো কিছুই নেই।

ওকে গাড়িতে তুলে একটা খাবারের দোকানে এসে দাঁড়ায়।
থরে থরে সাজানো খাবার দেখে বাবলুর এতোক্ষণের পরিশ্রম ক্লান্তি রাত থেকে জমানো ক্ষুধা পেটে মোচড় দিয়ে ওঠে।
ও পেট ধরে বসে পড়ে সাথে সাথে ঘাম বের হয়। ও শুয়ে পড়ে। নীল কাপড়ের টুকরো বাঁধা একটি ছেলে এগিয়ে আসে। মুখ চাওয়া চাওয়ি করে সবাই। একজন ওকে পাখার তলে এনে শোয়ায়। একজন শার্টের বোতাম খুলে দেয়।
কিছুতেই ঘাম ঝরা বন্ধ হয় না।একজন নিজের শার্ট খুলে ঘাম মুছতে গিয়ে টের পায় প্রচুর ঘামছে। দোকানের ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা পানির বোতল খুলে নিজের টিশার্ট ভিজিয়ে মুছে দেয় মুখ। কিছটা পানি ওর মুখে ঢেলে দেয়।
-চল হাসপাতালে নিয়ে যাই।
ধরাধরি করে ওকে গাড়িতে উঠায়।
– আমার মায়েরে এক বস্তা চাইল দিবেন না ভাই।
গোঙানির মত করে বলে বাবুল।
-দেব দেব তুমি তোমার বাসার ঠিকানা বল।
বাবলুর ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে ফেনার মত থু থু বের হয়। আস্তে করে চোখ বন্ধ করে বাবলু। –
– কোন হাসপাতালে নিয়ে যাব বল। আর এখন তো হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা খুব কঠিন। কি ঝামেলায় পড়লাম ক দেখি।
-হাসাপাতালে যেতে হবে না
বাবলুর কোলে মাথা

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD