বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
উদার আকাশ: সাহিত্যচর্চাকে এক সমাজ চেতনায় রূপান্তিত করেছে

উদার আকাশ: সাহিত্যচর্চাকে এক সমাজ চেতনায় রূপান্তিত করেছে

হারাধন চৌধুরী

সম্ভাবনার বীজ, যোগ্যতা ও পরিবেশ—এই তিনটি জিনিস হল যে-কোনও সৃষ্টির প্রধান উপকরণ। কিন্তু সব থেকেও অনেক সময় সৃষ্টি সম্ভব হয় না, উদ্যোগের অভাবে। উদ্যোগসহকারে শুরু করাটা তাই সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। কোনও কোনও ব্যক্তি অনেকসময় প্রতিকূল প্রতিবেশকেও অনুকূলে আনতে সক্ষম। এমন পটু ব্যক্তির পক্ষে শুভ কাজের সূচনা অনেক সহজ ও সুন্দর হয়। কিন্তু শুরুটাই সব নয়, সৃষ্টির সার্থকতা তার উন্নয়ন ও উত্তরণে। তার জন্য জরুরি ধারাবাহিকতা। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না-পারলে কোনও সৃষ্টি আর মহৎ থাকে না। অকালমৃত্যু সৃষ্টিকেই যেন অর্থহীন করে তোলে।
বাংলা সাহিত্যচর্চা দু’ভাবে চলে। একটি চলে প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে এবং অন্যটি প্রতিষ্ঠানের সাহায্য ছাড়াই। সাহিত্যচর্চার অন্যতম হাতিয়ার হল পত্রিকা প্রকাশ। প্রতিষ্ঠানের তরফে প্রকাশিত পত্রিকার নজর থাকে বাণিজ্যিক লাভালাভের দিকে। আর্থিক লাভের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পত্রিকার অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা কমে যায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সাপোর্ট বা অনুকম্পার প্রত্যাশা না-করে যে সাহিত্যচর্চা হয়ে থাকে সেখানে বাণিজ্যিক লাভ-ক্ষতির বিষয়টি গৌণ। এই শ্রেণির পত্রিকাগুলির এক ও একমাত্র লক্ষ্য—সৎ সাহিত্যের সঙ্গে নিত্যবাস। সৎ সাহিত্যের প‍্রতি অবিরল দায়বদ্ধ সাহিত্যপিপাসুদের কাছে কাউকে খুশি করার দায় থাকে না। তাঁরা পরোয়া করেন না কারও আপত্তি কিংবা বিরোধিতার। তাঁরা কোনোরকম তোষামোদ, মেকি প্রশংসা এবং ছোট-বড় পুরস্কারের প্রত্যাশাও রাখেন না।
সাহিত্যচর্চায় ব্রহ্মচারী অথবা সন্ন্যাসী গোছের এই মানুষগুলির হাতে যে পত্রিকা প্রকাশিত লালিত পালিত শ্রীবর্ধিত হয়, সেগুলিকে আমরা ‘লিটল ম্যাগাজিন’ নামে উল্লেখ করে থাকি। কেউ কেউ এই শব্দবন্ধের বঙ্গীকরণ করেছেন—‘ছোট কাগজ’। লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাস বলে যে এরা নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। মূলত সাহিত্যের নেশায় মশগুল স্কুল-কলেজ-পড়ুয়া বেকার-যুব-শ্রেণি এই পত্রিকাগুলি প্রকাশ করে থাকে। দীপক মজুমদার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শক্তি চট্টোপাধ্যায় শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় আনন্দ বাগচীদের ‘কৃত্তিবাস’ প্রকাশের কথা কে না জানে। ‌শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, ‘এক দশকে সঙ্ঘ ভেঙে যায়’। এই কথা মাথায় রেখে সুনীল একটি লেখায় যথার্থই বলেছিলেন, ‘বাংলা লিটল ম্যাগাজিনে এই ভাঙাভাঙির জন্য দশবছরও লাগে না। অনেক উচ্চমানের লিটল ম্যাগাজিন চার-পাঁচবছরের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যায়।’
আর এই জায়গাটিতেই নিজেকে বিশিষ্ট করে তুলেছে ফারুক আহমেদ সম্পাদিত ‘উদার আকাশ’। উদার আকাশকে আমি লিটল ম্যাগাজিনের বন্ধনীতে রাখতেই পছন্দ করি। ২০২১-এর শারদীয়া মরশুমে ‘উদার আকাশ’ প্রকাশ করল তার ‘কুড়ি বছর পূর্তি সংখ্যা ১৪২৮’। লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাসে হাতেগোনা যে-ক’টি কাগজ তারকার মতো এইভাবে স্বমহিমায় উজ্জ্বল উদার আকাশকে তার মধ্যে রাখতেই হবে। লিটল ম্যাগাজিনগুলির মধ্যে কখনও কখনও একটি গোঁড়ামি মৌলবাদের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র নতুন লিখিয়েদের লেখাপত্রই প্রকাশ করা করবে তারা, প্রতিষ্ঠিতদের বর্জন করবে পুরোপুরি, আবর্জনার মতোই। কারণ তারা মনে করে, প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক মানেই প্রতিষ্ঠানের দালাল! অতএব তাঁরা লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের বিশিষ্ট শত্রু।
‘উদার আকাশ’ এই ক্ষেত্রে তার একটি ব্যতিক্রমী মানসিকতাই তুলে ধরতে পেরেছে। লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা কোনোরকম গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় দেয়নি। পত্রিকাটি নিজের নামের প্রতি সুনাম রক্ষার দায়িত্বই পালন করল বলব। পত্রিকাটি নিশ্চয় উপলব্ধি করেছে—নতুনদের বেশি করে সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিতদেরও কিছু লেখা ছাপলে তা কোনোভাবেই দালালি দোষে দুষ্ট নয়। তাতে বরং নতুনদের উপকার হবে। অগ্রজদের লেখাগুলি পড়ে তাঁরা নিজেদের ভুলত্রুটিগুলি শুধরে নিতে পারবেন। আত্মমূল্যায়েনর এই পদ্ধতি বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। অন্যদিকে, অগ্রজ বিখ্যাতরাও অনুজদের লেখাপত্রে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বুঝতে পারবেন, আজকের সাহিত্য কোন খাতে বইছে, কোন দিকে মোড় নিতে চলেছে। আগামীর ভাবনার সঙ্গে তারকাদের পরিচয় ঘটানোর এই প্রক্রিয়ার মূল্য কোনও অংশে ন্যূন নয়।
শুরুতেই, ‘উজ্জ্বল উদ্ধার’ বিভাগে ‘ক্ষমতার রাজনীতি ধর্মকে ব্যবহার করছে’ শিরোনামে যাঁর লেখা ছাপা হয়েছে তিনি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। ‘শঙ্খ ঘোষ স্মরণ’ বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে মইনুল হাসানের ‘বাংলার বিবেক আর নেই’ শীর্ষক একটি সুন্দর রচনা। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুমিতা চক্রবর্তীর ‘কাজী নজরুল ইসলাম ও আন্তর্জাতিকতা’ শিরোনামের লেখাটি জায়গা পেয়েছে নজরুলচর্চা বিভাগে। কবি-ছান্দসিক-গবেষক আবদুল কাদেরকে নিয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন সাহিত্যিক মুহম্মদ মতিউল্লাহ্। নামী সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল উপহার দিয়েছেন ‘এক বাঙালি হিন্দুর ইসলাম চর্চা’। প্রকাশিত হয়েছে মীরাতুন নাহার, শামীম আহমেদ, অজিত বাইরি, গোলাম রসুল, সফিউন্নিসা, অভিজিৎ সিরাজ, কুমারেশ চক্রবর্তী, মোশারফ হোসেন, স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী, শামসুন নাহার, গৌতম বিশ্বাস প্রমুখ পরিচিত কবি লেখক চিন্তাবিদের কিছু মূল্যবান লেখা। পাঠকদের বিরাট পাওনা সুবোধ সরকারের পাঁচটি কবিতা এবং নাসের হোসেনের চারটি কবিতা। মোট ২৮৮ পাতার সুবৃহৎ সুদৃশ্য আয়োজনের এই পত্রিকায় অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে জায়গা পেয়েছেন একঝাঁক একেবারে নতুন কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিকরাও। প্রবন্ধ বিভাগে গুরুত্ব পেয়েছে শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, সত্যজিৎ রায়ের মূল্যায়ন, বিভাগপূর্ব বাঙালি মুসলিম লেখিকাদের গদ্যচর্চা, প্লাস্টিকের দূষণ, বাঙালির প্রান্তিক জীবনে হালফিল সর্বনাশা অর্থনীতির কোপ প্রভৃতি। আছে অণু নাটিকা, অণু উপন্যাস এবং উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ সমালোচনা।
সাহিত্যচর্চার জায়গা থেকে ‘উদার আকাশ’ সব মিলিয়ে যে ভূমিকা পালন করেছে, তা সমাজ চেতনার এক দায়িত্বপূর্ণ নিদর্শন হয়ে উঠল।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD