হাসিবা খান।।
কোল্লাপাথর এর ইতিহাস ব্যতীত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনেকটাই অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। ১৯৭১ এ কোল্লাপাথর এবং এর আশেপাশের গ্রামগুলো ছিলো এক টুকরো স্বাধীন ভূখণ্ড! এর তিনদিকে ভারত (ত্রিপুরা); এই কারণেই মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস পাক হানাদারদের দখলমুক্ত ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার দক্ষিন পূর্বে ১০ কিমি দূরে অবস্থিত বায়েক ইউনিয়ন এর সীমান্তঘেরা এ অংশটুকু। ১৯৭১ এ পাহাড়ি এই এলাকাটি ছিলো একটি দুর্গম জনপদ। সীমান্তবর্তী এই এলাকাটি ছিলো মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের আওতায়, ওপারেই আগরতলা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিশালগড়, বিশ্রামগঞ্জ, চুড়িলাম। প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থাকার কারণে এ অঞ্চলটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম লক্ষে পরিনত হয়েছিল ফলে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এ এলাকায় বেশি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। কোল্লাপাথর এর অনতিদূরে সালদা নদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকাটি ছিলো মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ফ্রন্ট, এখানে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাতবরণ করেন।
অন্যদিকে পাকসেনারাও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের শিকার হয়। সালদা নদী, মন্দভাগ ও চান্দলা এলাকার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন সেসকল শহীদদের নিয়েই কোল্লাপাথর সমাধি সৌধটি গড়ে তোলেন ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ ও সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এইচ,এম গাফফার।
শাহাদাত বরণকারী ৫০ জন বীরের সমাধি রয়েছে কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থলে। এঁদের মাঝে আছেন দু’জন বীর বিক্রম, একজন বীর উত্তম এবং দু’জন বীরপ্রতীক। যুদ্ধের বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সহযোদ্ধাদের লাশ বহন করে নিয়ে এসে পরম মমতায় দাফন করেছেন জীবিত যোদ্ধারা এ স্বাধীন ভূখণ্ডে। এ কাজে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছেন কোল্লাপাথর গ্রামের মোঃ আবদুল করিম যিনি একদিকে যুদ্ধ করেছেন, আর অন্যদিকে শহীদদের দাফন করেছেন পৈত্রিক জমিতে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ওনার পিতা আঃ মান্নান পুরো সমাধিস্থলটি বাংলাদেশ সরকারকে বিনামূল্যে হস্তান্তর করেন।
১৯৭১ সাল থেকে এ সমাধিস্থল সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের জীবন্ত সাক্ষী ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল করিম, তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর পরম মমতায় আগলে রেখেছিলেন এই সমাধি সৌধ, নিজ হাতে সমাধি সৌধের তত্ত্বাবধান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ এবং সমাধি সৌধ রক্ষণাবেক্ষন করে সময় কাটিয়েছেন।
কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই জীবন্ত সাক্ষী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল করিম ইন্তেকাল করেছেন, উনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
সকলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, নিরাপদে থাকুন।
লেখিকা: সহকারী কমিশনার (ভূমি), কসবা।
Leave a Reply