ইব্রাহিম খলিল শিমুল, নোয়াখালী।
নোয়াখালী সুবর্ণচরে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে সফল হলেন মোঃ জামসেদ আলম নাকে এক পরিশ্রমী কৃষক।
সে উপজেলার চর আমান উল্যাহ ইউনিয়নের চর বজলুল করিম গ্রামের মোঃ আমিনুল হকের ছেলে।
কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। ১ মাসের বাসী গোবর খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যে সার তৈরি হয় তাঁকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়। এটি সহজ একটি পদ্ধতি ১-২ মাসের বাসী গোবর দিয়ে ব্যবহার উপযোগী উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করা হয়।
স্থানিয়রা জানান, সাহসী উদ্যোক্তা মোঃ জামসেদ তিনি সুবর্ণচরের একজন আলোচিত সফল তরমুজ চাষা। এর পাশাপাশি অন্যান্য চাষাবাদের মধ্যে আমন ধান, বোরো ধান ও বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজিও চাষ করে থাকেন সে। তবে কেঁচো সারের আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে কৃষি খাতকে আরো সম্প্রসারিত ও নিজ পরিবারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উদ্যোক্তা মোঃ জামসেদ বলেন, উপজেলা সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ শামসুদ্দিন স্যারের পরামর্শক্রমে আমি প্রথমে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে কমিউনিটি বেজড ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের জন্য একটি টিনের ঘর তৈরি করি। ঘরের ভিতরে ইট,বালি,সিমেন্ট দিয়ে এভাবে মোট ১৬ টি হাউজ (বক্স) করি। একেকটি হাউজ বক্স ৫ ফুট প্রস্থ ৬ ফুট দৈর্ঘ্য। প্রতিটি হাউজে ১০-১২ মণ গোবর ও ২’শত পিস কেঁচো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর চটের বস্তা দিয়ে হাউজটি ঢেকে রাখা হয়। এভাবে ২-৩ মাস ঢেকে রাখার পর তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার। যা কেঁচো সার নামে বেশি পরিচিত। তবে একবছরে ৫-৬ ধাপ এই সার তৈরি করতে পারি। এবং কেঁচোও দিন দিন বৃদ্ধি হয়। প্রতিটি কেঁচো ১-২ টাকা করে বিক্রি করতে পারি। এক কথায় স্বল্প সময়ে লাভবান হওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, রাসায়নিক সারের চেয়ে অনেকগুন মানসম্মত এবং অন্যান্য সারের তুলনায় এটি অনেক কার্যকর। এই কেঁচো সারের উপকারিতা বেশি হওয়ায় জমিতে প্রয়োগে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকরা। এ ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহারে আমাদের জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি শাকসবজি, ফলমূলের ফলনও ভালো হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, কেঁচো সার (vermi compost) দারুণ এক সার যা ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি সহ মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যাপক কার্যকরি। শুধু তাই না, বানিজ্যিক ভাবে কেঁচো সার তৈরি করে বাড়ির আঙ্গিনায় কৃষক-কৃষাণীরাও আয় করে স্বাবলম্বী হতে পারে।
খন্দকার মোঃ দিদারুল আলম বলেন, খুবই লাভজনক হওয়ায় অনেক নতুন উদ্যোক্তা এতে আকৃষ্ট হচ্ছে। এবং কেঁচো সার ব্যবহারে জমি ও গাছপালা ঠিক থাকে। অন্যদিকে রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। খরচও বেশি হয়। সবদিক বিবেচনায় লাভজনক হওয়ায় অনেকেই কেঁচো সার উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত এমন নতুন উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, ফসলি জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো ও কৃষকদের পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতেই সরকার জৈব সার উৎপাদনকারীদের নানা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে কেঁচো সার উৎপাদনের বিষয়টি উপজেলার কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় চাষিরা কেঁচো সার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা কৃষকদের পরিবেশবান্ধব জৈব সার ব্যবহারের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছি।
তিনি আরো বলেন, সুবর্ণচরে ২০২১-২২ অর্থ বছরে কমিউনিটি বেজড ভার্মি কম্পোস্ট ২০৮ জন কৃষকের আওতাধীন ২৩২ মেট্রিক টন সার উৎপাদন হয়। যা খুব সহজে স্বল্প সময়ে লাভবান হতে পারে কৃষক। এবং বড় আকারে উপজেলার কয়েকটি হাউজ ভিত্তিক ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করেছে মোঃ জামসেদ, নিজাম উদ্দিন, আবদুল কাদের, হারুন অর রশিদ, ইব্রাহিম খলিল’সহ আরো অনেকে। এবং অন্যরা রিং এর সাহায্যে তৈরি করেছে।
Leave a Reply