কাপাসিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্নস্থল একডালা দুর্গ । কাপাসিয়া উপজেলা একটি প্রাচীন জনপদ। এ জনপদের ভূমি গঠিত হয়েছে ২৫ লক্ষ বছর আগে(সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)। উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম একডালা দুর্গ যেটি বাংলাদেশের বর্তমান গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার অন্তর্গত একটি স্থান। যা বাংলার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শীতলক্ষ্যা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিমে ।আনুমানিক ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জনৈক হিন্দু রাজা এই একডালা দুর্গটি (Ekdala Fort) নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু তার নামটি আজও অজ্ঞাতই রয়ে যায়।দুর্গটির দৈর্ঘ্য ছিল ৫ কিলোমিটার আর প্রস্থে ছিল ২ কিলোমিটার।
পান্ডুয়ার শাসনকর্তা শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলার যখন স্বাধীন সুলতান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন , তিনি তখন দিল্লীর সুলতান ফিরোজ তুঘলকের সাম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে হতে ১৩৫২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে দুর্গটির সংস্কার সম্পন্ন করেছিলেন। ১৩৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ফিরোজ তুঘলক বাংলা আক্রমণ করলে, ইলিয়াস শাহ কোনো বাধা না দিয়ে এই দুর্গে আশ্রয় নেন। এই সময় বাংলার রাজধানী ফিরোজ তুঘলক দখল করলেও একাডালা দুর্গ দখল করতে পারেন নি। কয়েক মাস অবরুদ্ধ থাকার পর, উভয় বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হলে, বাংলার সৈন্যরা পরাজিত হয়, কিন্তু তখনও একডালা দুর্গ অপরাজেয় ছিল। অবশেষে হতাশ হয়ে ফিরোজ শাহ দিল্লী ফিরে যান। পরে উভয়ের ভিতরে শান্তি স্থাপিত হয়।
১৩৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ইলিয়াস শাহ মৃত্যুবরণ করলে, বাংলার সিংহাসনে বসেন সিকান্দার শাহ। ইলিয়াস শাহ-এর মৃত্যুর পর, এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, ফিরোজ তুঘলোক পুনরায় বাংলা আক্রমণ করেন। এবারও পিতার মতো সিকান্দার শাহ একডালা দুর্গে আশ্রয় নেন। কয়েকমাস এই দুর্গ অবরোধ করে রাখার পর ফিরোজ তুঘলক সন্ধি করেন। এরপর ফিরোজ তুঘলক বাংলার স্বাধীনতা মেনে নিয়ে দিল্লীতে ফিরে যান।
এর পৌনে দু’শ বছর পর ১৫১৮ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র নাসির উদ্দিন শাহ পুনরায় দুর্গটি সংস্কার করেন। রায়েদ ইউনিয়নে কালী বানার নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত দ্বার-ই দরিয়া (দরদরিয়া) দুর্গ ছিল একডালা দুর্গের শাখা দুর্গ। মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে রাজা টোডরমল এ অঞ্চলকে ভাওয়াল পরগণায় অন্তর্ভুক্ত করেন। ক্রমে ক্রমে এই দুর্গটি পরিত্যাক্ত হয়। এভাবেই পূর্বপুরুষের গড়ে তোলা হাজার বছরের সংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলছি। সেই সাথে হারিয়ে ফেলেছি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ আইন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় আমরা প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছি আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল যা আমাদের প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার উজ্জল দৃষ্টান্ত ।পুরাকীর্তি নষ্ট বা ক্ষতিসাধন করা ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইনের ১২ ও ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রশাসনের সুদৃষ্টি ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রত্নসম্পদ রক্ষায় সবচেয়ে বড় শক্তি ।সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্মৃতিস্তম্ভের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতনতা ও জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে আগত প্রজন্মের কাছে গৌরব ইতিহাস তুলে ধরতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এজন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য চর্চার বিকল্প নেই।
জাহিদুর রহমান হিমেল
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগ
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ
Leave a Reply